রেলের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তাকে বরখাস্তকারী পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, টিটিই শফিকুলকে পুরস্কৃত করাও হতে পারে। রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন রোববার রেলভবনে তার নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের এসি কামরায় চড়ে ঢাকায় ফিরছিলেন তারা। পরে বৃহস্পতিবার রাতে ‘যাত্রীর সঙ্গে অসদাচরণের’ অভিযোগে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বরখাস্ত হওয়া টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যুক্ত হন। এ বিষয়ে টিটিই শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী তিন যাত্রীর কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। তখন তিনি তাদের জরিমানা ও সুলভের ভাড়া বাবদ মোট ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে এসি কামরা ছাড়তে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে ওই তিন যাত্রীর কথা কাটাকাটি হয়। এর পর তারা এসি কামরা ছেড়ে শোভন কামরাতে ঢাকায় পৌঁছান। কিছুক্ষণ পরই মোবাইল ফোনে তাকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়। সূত্র জানায়, তিন যাত্রীর একজন ইমরুল কায়েস প্রান্ত লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। অভিযোগপত্রে তিনি জানান, টিটিই শফিকুল তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। ঢাকায় যাওয়া জরুরি হওয়ায় কাউন্টারে টিকিট না পেয়েও তারা ট্রেনে উঠতে বাধ্য হয়েছেন। তাড়াহুড়ো থাকায় তারা এসি কামরায় উঠে পড়েন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, একজন টিটিইর দায়িত্বই হচ্ছে এটি দেখা যে, কোনো যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছেন কিনা। যাত্রীদের সহযোগিতা করা। ডিসিপ্লিন আনার ক্ষেত্রে একজন টিটিইর এটিই দায়িত্ব। আমি এ কথাটাই বলেছি। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার পরও টিটিই বরখাস্তের ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, নেতিবাচক ধারণা তো অবশ্যই হবে। এটি ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ সেভাবে দেখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামকে পদোন্নতি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতে পারে। তাকে পুরস্কৃত করার কথাও ভাববে রেলপথ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী জানান, সংশ্লিষ্ট ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পুরো ঘটনাটা বের হয়ে আসবে। স্ত্রীর কথায় টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, গতকাল পর্যন্ত তিনি জানতেন না যে অভিযোগকারীরা তার স্ত্রীর আত্মীয়। তিনি পরে জানতে পেরেছেন। মন্ত্রীর স্ত্রী শুধু অভিযোগ করেছেন, কাউকে বরখাস্ত করতে বলেননি। আত্মীয়দের না চেনার বিষয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়া তিনজনের সঙ্গে সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রী জানান, মাত্র ৯ মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। নতুন যে স্ত্রীকে আমি গ্রহণ করেছি, সে ঢাকাতেই থাকে। তার মামাবাড়ি ও নানাবাড়ি হলো পাবনা। আমি শুনেছি তারা আমার আত্মীয়। এটা এখন ঠিক, যেটা আমিও এখন শুনেছি। এর আগে পর্যন্ত আমি জানতাম না, এরা কারা এবং আমার জানার কথাও না।প্রসঙ্গত গত ৪ মে দিবাগত রাতে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রীকে বিনা টিকিটে রেলভ্রমণের দায়ে জরিমানা করেন টিটিই শফিকুল ইসলাম।