টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভুল রক্ত পুশ করার ঘটনায় সাতদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে প্রাণ হারিয়েছেন আব্দুর রউফ (৭০) নামের এক বৃদ্ধ। বুধবার (২৫ জুন) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। রক্তের গ্রুপ নির্ধারণে গাফিলতি এবং ভুল রক্ত পুশের অভিযোগ ঘিরে শহরে চাঞ্চল্য ও তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার কৌপাখী গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুর রউফ হাড় ক্ষয়সহ নানা জটিলতা নিয়ে গত ১৮ জুন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দিলে পরিবারের সদস্যরা ‘ও’ পজেটিভ রক্তদাতা সংগ্রহ করে ব্লাড ব্যাংকে নিয়ে আসেন।
তবে হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট রঞ্জু ক্রস ম্যাচিংয়ের পর জানান, রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘এবি’ পজেটিভ। এতে বিভ্রান্ত হয়ে স্বজনরা নতুন করে ‘এবি’ পজেটিভ রক্তদাতা খুঁজে এনে রক্ত সরবরাহ করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় রোগীর শরীরে ‘এবি’ পজেটিভ রক্ত পুশ করা হয়। পুশের প্রায় ৪০ মিনিট পরেই রোগীর শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। রক্ত দেওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।
পরবর্তীতে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের রিপোর্টে রোগীর রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ আসে। তবে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল এবং একটি বেসরকারি ক্লিনিক ‘এবি’ পজেটিভ রিপোর্ট দেয়। রোগীর ছেলে মো. উজ্জ্বল ওরফে রানা বলেন, “জেনারেল হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট রঞ্জুর ভুল রিপোর্টের কারণে ভুল রক্ত পুশ করা হয়েছে। এর দায়ভার হাসপাতালের এড়ানোর সুযোগ নেই।”
এ বিষয়ে ল্যাব টেকনোলজিস্ট রঞ্জু দাবি করেন, “রক্তের গ্রুপ একাধিকবার পরীক্ষা করেছি, প্রতিবারই ‘এবি’ পজেটিভ এসেছে।” ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সাদিকুল ইসলাম বলেন, “এটি টেকনোলজিস্টের ভুল। আমরা দায় এড়াতে পারি না। স্বজনরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “ভুল রক্ত পুশের পর রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়। হিমোলাইটিক রিঅ্যাকশনের জন্য রোগীকে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং উন্নত চিকিৎসার পরামর্শও দেওয়া হয়েছিল।” নিহতের পরিবার প্রশাসনিক তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছে।