প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত রোগীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রদান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ঔষধ সরবরাহ করেছে স্বেচ্ছাসেবী স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ক্যাম্পস ১৮বছর যাবৎ ধারাবাহিক ভাবে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর থানার হাতিবান্ধা গ্রামের তালিমঘর প্রাঙ্গণে এই ব্যতিক্রম ধর্মী আয়োজনটি করে আসছে।
সপ্তাহ ব্যাপী নিবন্ধিত দরিদ্র রোগীদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পররোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত, প্রসাব, ইসিজি, আল্ট্রা সনোগ্রাফিসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হয় এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিন রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আগত বিশেষজ্ঞসহ প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, দিনব্যাপী রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র প্রদান করেন এবং বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করেন। পাশাপাশি দুই শতাধিক চক্ষু রোগীদের চোখের ছানী অপারেশন ও লেন্স প্রতিস্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। এ ছাড়া জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতন করার লক্ষ্যে “স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সুস্থ জীবনধারা” শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ এখলাসুর রহমান, অধ্যক্ষ, আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ। ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
আলোচনা সভায় কিডনি বিষয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ। তিনি কিডনি রোগের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেণ।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে ৮৫ কোটি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, কিডনি বিকল মৃত্যু কারণ হিসেবে দুই যুগ আগে ২৭তম স্থানে ছিল, যা বর্তমানে দাড়িয়েছে ৭ম স্থানে এবং ২০৪০ সালে দখল করবে ৫ম স্থান। দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিডনি রোগের হার। বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনি বিকল রোগের চিকিৎসা এতো ব্যয়বহুল যে, এদেশের শতকরা ১০ভাগ লোক এই ব্যয় সংকুলান করতে পারে না। অথচ একটু সচেতন হলে, সুস্থজীবন ধারা, যেমন- নিয়মিত শরীর চর্চা, সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধুমপান পরিহার করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেদনানাশক ঔষধ সেবন না করা, পর্যাপ্তপরিমানে পানি পান করা, উচ্চ রক্তাচপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রভৃতি নিয়মগুলো মেনে চললে৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ সম্ভব।
অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ মনে করেন, আর্তমানবতার সেবায় দিনটি উৎসর্গ করা ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান দেখানোর একটি মোক্ষম উপায়।
সভায় প্রধান অতিথি, জনাব অধ্যাপক ডাঃ এখলাসুর রহমান বলেন, এমন মানবিক আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। সমাজের প্রত্যেকে ক্যাম্পস এর মতো মানবিক কর্মকান্ডে নিজেদের সাধ্যমতো অবদান রাখা উচিত।
তিনি আরো বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আয়োজিত এসব স্বেচ্ছাসেবী ও মানবিক কর্মকান্ডে সরকারী ও বিত্তবান শ্রেণীর মানুষদের সহযোগীতা খুব জরুরী।
ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি নাসরিন বেগম, তার স্বাগত বক্তৃতায় ক্যাম্পস এর দীর্ঘ পথচলার কিছু চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বিগত দেড় যুগে প্রায় ৯৭ হাজার রোগী এই ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছে। চোখের ছানী অপারেশন করা হয়েছে ২৮৫০ জনের। ঠোটকাটা, তালুকাটা রোগীদের অপারেশন করা হয়েছে ৩০০ জনের এবং গরীব অসহায় কিডনি বিকল রোগীদের ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া হয়েছে ৮৪ হাজারেরও অধিক সেশন।
তিনি ক্যাম্পস এর সেবা কার্যক্রম আগামীতে আরো গতিময় করার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন।
ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক, জনাব রেজওয়ান সালেহীন, ক্যাম্পস এর মানবিক কর্মকান্ডে সহযোগিতার নিমিত্তে, আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকল নিবেদিত প্রান, চিকিৎসক এবং টাঙ্গাইল জেলা রোভারের সকল সদস্যদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কিডনি বিকল রোগীদের পাশে দাড়িয়ে, মানবিক কাজে নিজেদের কর্মকান্ড নিরলস ভাবে চালিয়ে যাবার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক ডাঃ হাবিবুজ্জামান, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অধ্যাপক ডাঃ সেহরিন ফরহাদ সিদ্দিকা, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অধ্যাপক ডাঃ ফাইজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অধ্যাপক ডাঃ আজফার উদ্দিন শেখ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মূত্রতন্ত্র বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। জনাব আবু হানিফ আজাদ, মেয়র, সখিপুর পৌরসভাসহ আরো অনেকে। সকলেই ক্যাম্পস আয়োজিত এই মানবিক কর্মকান্ডের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যাতে সামাজিক সকল কাজে তাঁদের সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন।
পরিশেষে রোগীদের জন্য একটি মনোজ্ঞ সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।