Thursday, June 26, 2025
Homeইসলামআয়েসি জীবন-যাপনে নবীওয়ালা মজিজা ও দিন দিন আমল কমে যাচ্ছে

আয়েসি জীবন-যাপনে নবীওয়ালা মজিজা ও দিন দিন আমল কমে যাচ্ছে

মোঃ রফিকুল ইসলাম

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ছিলেন সাধারণ মানুষ। আল্লাহ-তায়ালা ইচ্ছা করলে হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে ধন সম্পদের মালিক বানাতে পারতেন। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) যদি আল্লাহর কাছে ধন-সম্পদ চাইতেন তাহলে মহান আল্লাহ-তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে সমগ্র জাহানের বা সমগ্র বিশ্বের বাদশা বানিয়ে দিতেন। কিন্তু তিনি তা কখনও চান নাই। তিনি অবশ্যই জেনেছেন আখেরাতের সময় থেকে এই দুনিয়ার সময় অনু পরিমানও নয়। সুতরাং তিনি আল্লাহর বানী প্রচার করে গিয়েছেন। তাঁর ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে আজ আমরা মুসলমান হতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। তিনিই হলেন আমাদের প্রিয় নবী বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। তিনিই হলেন পিয়ারে নবী এবং আল্লাহর প্রিয় বন্ধু। কেউ কেউ বলে থাকে তাঁকে সৃষ্টি করা না হলে এই সৃষ্টি জগত সৃষ্টি করা হতো না। কিয়ামতের দিন শেষ বিচারের সময় মহান আল্লাহ তায়ালার পাশের চেয়ারে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ)কে বসানো হবে এবং তিনিই হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)।

সর্বশ্রেষ্ঠ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)নবী-রাসুলদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল ছিলেন। কেননা মহান আল্লাহ বলেন আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (সুরা বনি ইসরাঈল-আয়াত-৭৯)।

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সঃ) বলেছেন, আমাকে সব নবীর ওপর ছয়টি বিষয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। তা-হলো, আমাকে ব্যাপকার্থক ভাবকে সংক্ষিপ্তভাবে প্রকাশের যোগ্যতা দান করা হয়েছে, প্রভাব-প্রতিপত্তি দান করে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্য সব জমিন মসজিদ ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম করা হয়েছে, সমগ্র সৃষ্টির জন্য আমাকে নবী করে পাঠানো হয়েছে এবং নবীদের আগমন ধারা আমার মাধ্যমে শেষ করা হয়েছে (সহিহ মুসলিম হাদিস: ৫২৩)

শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিতর্ক নয়: মহান আল্লাহ নবী-রাসুলদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করলেও তা নিয়ে বিতর্ক নিষিদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমরা আল্লাহর নবীদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করো না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস-৩৪১৪)।

শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিতর্ক নয় : মহান আল্লাহ নবী-রাসুলদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব দান করলেও তা নিয়ে বিতর্ক নিষিদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর নবীদের মধ্যে কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান কোরো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৪১৪)

ইমাম নববনী (রহ.) ‘এখানে শ্রেষ্ঠত্বদান নিষিদ্ধ হওয়ার অর্থ হলো, যা মানুষকে বিতর্ক ও পারস্পরিক গর্বপ্রকাশের দিনে নিয়ে যায়। (শরহু সহিহ মুসলিম: ১৪/৩৮)

আমরা কমবেশী সবাই জানি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর কোন পুত্র সন্তান ছিলেন না। তাই ঐ সময়ের কাফেরেরা হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে আটকুরা বলে হীন কতোপকতন করতো বা গালি দিতেন। কাফেরদের এই রুপ কথাবার্তা আচার-আচরণে মহান আল্লাহ-তায়ালা তাৎক্ষনিক সুরা কাউসার নাজিল করেন এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে সান্তনা দেন।

একবার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবীদের সাথে এক যুদ্ধের ব্যাপারে মুশারা করতে গিয়ে বলেছিলেন এই যুদ্ধে  তোমরা কে কি দান করবে। সবাই যার যার আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী দান করলেন। কিন্তু হযরত আবু বক্কর (রাঃ)কে দেখা যাচ্ছে না। প্রিয় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ডেকে বললেন “আমার আবু বক্কর কোথায়” হযরত আবু বক্কর একটু আড়ালে বসেছিলেন। তিনি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)কে বললেন আমার বাসায় দিবার মত কিছুই নেই তবে বাসায় যা কিছু ছিল এই পটুলির মধ্যে আছে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বললেন আজকের এই মজলিসের সবচেয়ে বড় দান আল্লাহর কাছে হযরত আবু বক্করের (রাঃ) এর পটুলির মধ্যে যা কিছু আছে।

হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ) ইসলামের পথে তাঁর সকল সম্পদ দান করে দিয়েছিলেন। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজেই বলেছিলেন “আমার  পরে আর কোন নবী আসার প্রয়োজন থাকলে হযরত ওমর (রাঃ) নবী হতেন”। ইসলামে আর কোন নবী/রাসুলের প্রয়োজন  না থাকাতে হযরত ওমর (রাঃ) নবী হতে পারেননি।

হযরত ওমর (রাঃ) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। যিনি বিশ্বের অর্ধেক শাসন করেছেন। তাঁর ছেলে ঈদে নতুন জামার জন্য বায়না ধরেছিলেন (পিতা) হযরত ওমর (রাঃ) এর নিকট। দুঃখের বিষয় তাঁর ছেলেকে নতুন জামা কিনে দেয়ার মত কোন বাড়তি টাকা ছিল না। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর অর্থমন্ত্রীর কাছে চিরকুট লিখলেন আগামী মাসের অগ্রিম বেতনের জন্য। মন্ত্রী মহদোয় হযরত ওমর (রাঃ) এর কাছে চিরকুট লিখলেন “আমীরে মমিনিন দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)আপনি লিখেদিন আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বাঁচবেন কিনা তা লিখে দিন। আমীরে মমিনিনে সারা জাহানের অর্ধেক শাসন কর্তা লজ্জা পেলেন এবং সেই ঈদে তাঁর ছেলের জন্য নতুন জামা কেনা হলো না।

একবার চিন্তা করুন দেখুন তাঁদের কথায় আল্লাহর রহমতে নদীতে জোয়ার-ভাটা হয়েছিল। তাঁদের কথায় আগুন শীতল হয়েছিল। তাঁদের কথায় মানুষের পরিবর্তে দুম্বা  কোরবানী হয়েছিল। তাঁদের কথায় জালেমরা পনিতে ডুবে মরেছিল। আজ আমাদের সমাজে যাদের উপর সেই নবীওয়ালা কাজগুলো বর্তাইতায়াছে তাঁরা কি করেছেন। তারা আজ বড় বড় অট্টালিকার মালিক হয়েছেন। তারা আজ বড় বড় ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তারা আজ সমাজে দুনিয়াবী কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তারা কিভাবে ইসলাম প্রচার করবেন। তারা কিভাবে ইসলামের খেদমত করবেন। তারা নিজেরাই ইসলামের মূল ভিত্তির উপর নেই। নবীওয়ালা কাজ যারা করেন তারা সম্পদের পাহাড় বানাতে চাহেন না। তাঁরা পুঁজি করে সম্পদ রাখেন না। তাঁরা কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক চলেন।

দুঃখের বিষয় আজ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি। যাদের উপর নবীওয়ালা কাজ তারা সম্পদের পাহাড় বানাতে চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন। এমন কি হিসাব নিলে দেখবেন অনেকেরই কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তাঁদের চলাফেরায় কোটি টাকা মূল্যের গাড়ী ব্যবহার করে যাচ্ছেন। প্রকৃতভাবে নবী ও রাসুলের যে কাজ তারা সেই কাজ থেকে সরে এসেছেন। যারফলে তাঁদের কথায় মানুষ হিদায়েত হচ্ছে না। তাদের কাজে সাধারণ মানুষ দিন দিন হতাসা হয়ে পড়েছে। যেমনটা হতাসা অনুভব করছে রাজনৈতিক নেতাদের থেকে।

আজ বড়ই আপসোস দুঃখের বিষয় হলো যারা নবীওয়ালা কাজ করবেন সেই সকল আলেমদের মধ্যে বাণিজ্যিকের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তারা আজ আয়েসি জীবন যাপন করছেন। তাঁদের উপর যে নবীওয়ালা দায়িত্ব সেখান থেকে সরে পড়েছে। ফলে তাঁদের দোয়া আগের মতো মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছায় কিনা সন্দেহ হচ্ছে।।

আগের দিনে আমরা ছোট বেলায় দেখিছি অনাবৃষ্টি বা অতিবিষ্টির জন্য দোয়া ইউনুছ পাঠ করে মসজিদে তবারক হিসাবে সিন্নি বিরতণ করা হতো। মহান আল্লাহর কাছে মুনাজাত তোলার সাথে সাথে বৃষ্টি নেমে যেত। হুজুরদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যেতো। তাঁদের সাথে উপস্থিত সকল মানুষ কান্না শুরু করতে মহান আল্লাহ পবিত্র দরবারে। বাসা বাড়িতে মা-বোনেরা পর্যন্ত কেঁধে কেঁধে আল্লাহর কাছে মনের বাসনা পুরণে দোয়া করতেন ক্ষমা চাইতেন। কিন্তু আজ আমরা দেখছি মুনাজাত বন্ধ হয়ে গিয়েছে, মিলাত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এটা কেন? পবিত্র কোরআনের পবিত্র সুরা–ইউনুস বর্নিত আল্লাহর ওলি সম্পর্কে বলা আছে। অর্থাৎ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ওফাতের তিন যুগ পর্যন্ত যারা ছিলেন বা তিন যুগের মধ্যে যারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা সকলেই আল্লাহ-তায়ালার পবিত্র বান্দা এবং সকলকেই আল্লাহর ওলি-আউলিয়া হিসাবে আল-কোরআন এবং হাদিস শরিফে বর্ণনা করা হয়েছে।

লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ে একান্ত সচিব, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য