শাহীন কামাল
জনৈক কৃষকের শস্য ক্ষেত্রে এক পথিক শর্টকাট পথে ঢুকে গেছেন। কৃষক লোকটিকে কারণ জিজ্ঞাসা করলো। লোকটি বলল, আমার ভুল হয়েছে। আমি ফিরে যাই। কৃষক বললো, তা হবে না। লোকটি বলল, তাইলে আমি সামনে চলে যাই। কৃষক বলল, তাও হবে না। লোকটি বললো, আমি এখন কিত্তাম? ‘তাও করা যাবে না’ কৃষক বলল।
করোনাভাইরাস মহামারি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিবসহ ছয় জনকে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। গত ১১ জানুয়ারি স্কুল কলেজ কেন খোলা হচ্ছে না, এ নিয়ে আরেকটি আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছিল।
গুটি বসন্ত পৃথিবী থেকে নির্মুল হতে কত বছর লেগেছে? দু চার বছর? পারস্যের চিকিৎসক আল-রাজি ৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম গুটিবসন্তের বর্ণনা দেন। ড. এডওয়ার্ড জেনার নামে একজন ব্রিটিশ ডাক্তার ১৭৯০ সালের দিকে গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন। ৫০ এবং ৬০-এর দশক জুড়ে ভারতে এই টীকার ব্যাপক ব্যবহার হয়েছিল। ১৯৭৪ সাথে ভারতে হাজার হাজার লোক মারা গিয়েছে এই গুটি বসন্তে। ১৯৭৫ সালের ১৬ অক্টোবর গুটিবসন্ত সংক্রমণের ঘটনার শেষ তথ্য পাওয়া যায় বাংলাদেশে। এর পরে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশকে গুটিবসন্ত জীবাণুমুক্ত দেশ হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, যদিও সেই সময়ে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলিতে গুটিবসন্ত সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। করোনা ভাইরাস নির্মূল হতে কয় বছর লাগবে- এ নিয়ে কোন প্রিডিকশন আছে? দু চার বছরের মধ্যে সমূলে বিনাশ হবে, এ রকম কোন সম্ভাবনা পৃথিবীর কোথাও তৈরি হয়েছে?
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকের মতো সকল শিক্ষার্থী বাসায় বসে আছে? আচ্ছা, রাস্তায় -গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা অল্পবয়সী ছেলেরা কী স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী নয়? পৌরসভা ইলেকশনে মিছিলে তো দেখছি শিক্ষার্থীদের বয়সী অনেকেই আছে? বিপনি বিতান, খেলার মাঠে আর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বাবা মার হাতে হাত ধরে চলছে স্কুল পড়ুয়া বয়সী ছেলেমেয়েরা। এদের দেখলে তো শিক্ষার্থীই মনে হয় আমার!
স্কুল/ কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের বাসায় রাখা কষ্ট হচ্ছে। রুটিন করে তারা বাইরে খেলতে যাচ্ছে, ঘুরতে যাচ্ছে। যাদের বাসায় আঁটকে রাখছে বাবা-মা, তাদেরকে টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার দিয়ে রাখতে হচ্ছে। মোবাইলে অবশ্য তারা সারাদিন অনলাইনে ক্লাস করছে। এই ক্লাসে বেশিরভাগ এখন বাবা মা বিরক্ত। সন্তাররা এখন রাতদুপুরেও মোবাইল ফোনে ক্লাস করছে! ‘স্কুল কলেজে কোন লেখাপড়া নাই’ গলা শুকিয়ে কথা বলা অভিভাবকও আজ বলছে, আর পারছিনা ছেলেটাকে নিয়ে! স্কুল কবে খুলবে? সারাদিন মোবাইল নিয়ে পরে থাকে!
তো, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলে লেখপড়ার কিভাবে হবে? পরবর্তী ক্লাসে কিভাবে যাবে শিক্ষার্থীরা? আটোপাশ?
– তা কী করে সম্ভব? পরীক্ষা ছাড়া পাশ তো শিক্ষাব্যবস্থা শেষ করে দিবে।
– আপাতত লেখা পড়া বন্ধ থাক। বাচ্চারা ঘরে বসে সময় কাটাক।
– লেখা পড়া বন্ধ থাকলে জাতির ভবিষ্যৎ কি হবে? আর বাচ্চারা কি আর এখন ঘরে থাকে? ঘরে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন মোবাইল টিভি নিয়েই থাকে। পড়াশোনা গাছে উঠেছে।
– তাইলে, এখন কিত্তাম?
– তাও, করা যাবে না।