Thursday, November 13, 2025
Homeঅপরাধমাদ্রাসায় না গিয়েই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাওঃ লোকমান

মাদ্রাসায় না গিয়েই বেতন-ভাতা নিচ্ছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মাওঃ লোকমান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ভোলা লালমোহনে এক শিক্ষক মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের নাম প্রভাষক মাওঃ লোকমান হোসেন। তিনি ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার নাজিরপুর দারুল আউলিয়া হোসাইনিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক। 

অভিযোগ অনুযায়ী, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে একদিনও মাদ্রাসায় যাননি তিনি। অথচ নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আরবি প্রভাষক হিসেবে মাওঃ লোকমান ওই মাদ্রাসায় এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে ৩১-০১-২০২২ তারিখে যোগদান করেন। যাহার ইনডেক্স  M0026917 নাম্বার। মাদ্রাসায় চাকুরিতে যোগদানের পর থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় কখনো ক্লাস নেন নি। দিনের পর দিন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান থেকে বঞ্চিত করছেন। এবং কখনো তার হাজিরা খাতায় তিনি নিজে স্বাক্ষর না করলে ও কোন অলৌকিক ভাবে স্বাক্ষর করে মাস শেষে সরকারি কোষাগার থেকে হাজার হাজার টাকা বেতন-ভাতা সবই হিসাব কষে তুলে নিচ্ছেন তিনি।

একাধিক অভিভাবক বলেন, এই মাদ্রাসাটি খুব সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা একজন পীর সাহেব। মাদ্রাসার পূর্বের  প্রিন্সিপাল অবসরে যাওয়ায় আবুল হাসেম মাওঃ দেবিরচর মাদ্রাসা থেকে এসে এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে নিয়োগ নেন। মাদ্রাসার শিক্ষক সংকট থাকায় এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন এই মাওঃ লোকমান। কিন্তু  তিনি মাদ্রাসায় না আসায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, মাওঃ লোকমান নামের কোনো শিক্ষককে আমরা চিনি না। কোনো দিন দেখিওনি। অভিভাবকদের দাবি আমরা পূর্বে ও মৌখিক ভাবে জানাইছি এই শিক্ষকের ব্যাপারে কোন প্রতিকার হয়নি। আমাদের কোমলমতি ছেলে/মেয়েদের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হোক তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। শুধু ছাত্র/ছাত্রীদের পড়াশোনা নয় সরকারের অগণিত টাকা আত্মসাৎ হোক তাও মানতে কষ্ট হচ্ছে। মিথ্যা ভাবে সরকারের টাকা এই ভাবে একজন আলেম যদি আত্মসাৎ করে হারাম টাকা ভোগ করে তাহলে আমাদের কি হবে। আমরা অনুপস্থিত শিক্ষকের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় তদন্ত কমিটিসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাওঃ লোকমান নারায়ণগঞ্জে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তে চাকরি করেন। একজন আলেম ও ভালো লেবাসধারী হওয়াই মালিকের বিশ্বাসের সড়লতার সুযোগ নিয়ে ওই চাকরির পাশাপাশি মালিকের চোখে ধুলো দিয়ে নিজেই বিভিন্ন ভাবে মালামাল ক্রয় বিক্রয় করে এবং মালিককে ছয় নয় বুঝিয়ে হয়ে যান লক্ষ্য লক্ষ্য টাকার মালিক। ক্রয় করেন নামে বেনামে অগনীত সম্পদ। যাহা মালিকের অগোচরে লেবাসের আড়ালে করে ছিলেন। এর মধ্যেই টাকার বলয়ে বলই হয়ে বিভিন্ন সিস্টেম অবলম্বন করে নিয়ে নেন এনটিআরসিএ এর সনদ। নিয়োগ নেন প্রভাষক হিসেবে নামি একটি প্রতিষ্ঠানে। তার বড় স্বপ্ন ছিলো একজন প্রভাষক হবেন কিন্তু হয়েছেন ও ওই মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নষ্ট করে। কিন্তু তিনি একবারও চিন্তা করলেন না ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যত। তার একমাত্র ছেলেকে তামিরুল মিল্লাত এর মতো প্রতিষ্ঠানে ও দুই মেয়ে কে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করালেও অন্যের বাচ্চাদের প্রতি তার কোন কর্ণপাত নেই। অথচ তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার, আবুগন্জ বাজারের পশ্চিম পাশে, আসলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে ছাত্র/ছাত্রীদের পাঠদান দিয়ে আসছেন।

এবং ছাত্র/ছাত্রীদের অভিভাবকগণ এমন দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, দূর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ মাদ্রাসা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা বোর্ড ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর আবেদন জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়।

এই বিষয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওঃ আবুল হাসেম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ৬ মাসের ছুটি দিয়েছি। একসাথে ৬ মাসের ছুটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উচ্চস্বরে বলেন আমি ৬ মাস নয় দুই বছরের ছুটি দিবো তাতে আপনাদের কি? তার কাছে ছুটি বিষয়ে শিক্ষা অফিসার বা নির্বাহী কর্মকর্তা জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সভাপতি ছুটি দিয়েছে তিনি একজন পীর সাহেব আপনারা এগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না বলে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে উচ্চ বাচ্চ ব্যবহার করেন।

এই বিষয়ে অত্র মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ ফজলুল কবীর আল আযাদ পীর সাহেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়ে তো আমি বলতে পারবো না সব বিষয় প্রিন্সিপাল জানে। তবে প্রিন্সিপাল এর সম্পর্কে সব কথা শোনার পর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন কেন তিনি এমন আচরণ করেছেন। তবে আমি যতটুকু জানি মাওঃ লোকমান নিয়োগের পর থেকে না থাকলে ও অন্য লোকের মাধ্যমে ক্লাশ নেওয়ান। বেতন-ভাতা তুলেছেন কে? জানতে চাইলে কিছুই বলেন নি তিনি।

এ বিষয়ে মাওঃ লোকমান হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি যোগদানের পর এক দিন ক্লাস নিয়েছি তবে পরবর্তীতে আর যাওয়া হয়নি তবে ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে আমি রেগুলার হবো।  তার বেতন-ভাতা উত্তেলন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা যা ইচ্ছে তাই করেন বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমি এই বিষয়ে অবগত নয় আমাদের মাধ্যমিক অফিসার না থাকায় চরফ্যাশন থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন বিধায় তিনি ও অবগত নন। আমার কাছে লিখিত অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য