জাহিদ দুলাল, লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি:
৫৮ বছর বয়সী শাহানুর বেগম। এক সময় মোটামুটি ভালোভাবেই দিন কেটেছিল তার। তবে প্রায় বিশ বছর আগে পেটের পীড়ায় মারা যায় তার স্বামী। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চরলক্ষ্মী এলাকার দাসের ভিটায় অবস্থিত বাবা-মায়ের কাছে। তার বাবা-মাও থাকতেন অন্যের জমিতে।
বাগানের সুপারি-নারকেল দেখার বিনিময়ে সেখানে তাদের থাকতে দেওয়া হয়। তবে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর দুই মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার নতুন এক সংগ্রাম শুরু হয় অসহায় শাহানুরের। অন্যের জমিতে বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া ঝুপড়ি ঘরটি আঁকড়ে ধরে দিন কাটাতে শুরু করেন তিনি। বর্তমানে সেটিই তার স্থায়ী বসতি।
বিধবা শাহানুর বেগম বলেন, প্রায় ৩৫ বছর আগে লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর এলাকার মুন্সি বাড়ির নূর হোসেনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।
এরপর আমাদের সংসারে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। স্বামী জীবিত থাকতে তিনিই দিনমজুরী করে সংসার চালাতেন। তবে তার মৃত্যুর পর ছোট ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ি। চলে যাই বাবা-মায়ের কাছে। কিছুদিন পর তারাও মারা যান। তাদের মৃত্যুতে আমার যেন সব হারিয়ে যায়। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে শুরু করি দুই মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। অন্যের জমিতে রেখে যাওয়া বাবা-মায়ের ঝুপড়ি ঘরটিতে সন্তানদের নিয়ে থাকতে শুরু করি। মানুষের বাড়িতে কাজ করে, রাস্তার পাশ এবং বাগান থেকে শাকপাতা আর কচু-লতি সংগ্রহ করে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সেসবের বিনিময়ে চাল এনে কোনো রকমে দু’মেয়েকে নিয়ে খেয়ে-পরে দিন পার করি।
তিনি বলেন, এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় দুই মেয়েকে বিয়ে দেই। মেয়েদের স্বামীরাও অসহায়। তারা রিকশা চালান। তারাও থাকেন অন্যে জমিতে। এতে করে তাদের নিজেদেরই চলতে অনেক কষ্ট হয়। তারপরও তারা পারলে আমাকে কিছুটা সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া স্থানীয় মানুষজনও আমাকে সহযোগিতা করেন। এই সহযোগিতাই আমার দিন পার হচ্ছে। তবে শরীরটা এখন আর আগের মতো চলে না, হাঁটতে কষ্ট হয়। ডাক্তার বলেছেন আমার রক্ত শূন্যতা রয়েছে। এ জন্য শরীর প্রায় সময়ই থরথরে কাঁপতে থাকে।
শাহানুর বেগম আরো বলেন, কত অসহায় মানুষ জমিসহ ঘর পেয়েছে। অথচ আমার কপালে একটি ঘর জোটেনি। স্থানীয় লোকজন কয়েকবার আমার কাছ থেকে ভোটার আইডিকার্ড নিয়েছে ঘর দেবে বলে। তবে আজও ঘরের দেখা পাইনি। এ ছাড়া স্বামী মারা যাওয়ায় স্থানীয় মেম্বারের কাছে একাধিকবার গিয়েও কপালে জোটেনি একটি বিধবা ভাতা। সরকারিভাবে গরিবদের জন্য অনেক সুবিধা থাকলেও কখনো আমার কপালে জোটেনি কিছুই। কত মানুষ সরকারি চাল পায়, অথচ আমি এতো অসহায় হওয়ার পরেও এক মুঠো সরকারি চালও পাইনি। জানি না কত অসহায় হলে সরকারি এসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়! অথচ আমার কত কষ্ট করে চলতে হয়। তাই সরকারের কাছে দাবি করছি আমাকে একটি ঘর, বিধবা ভাতা এবং সরকারি চাল দেওয়ার।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ জানান, অসহায় ওই নারী আমাদের কাছে আবেদন করলে বিধিমোতাবেক তাকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।


















