
মোঃ রফিকুল ইসলামঃ
রুপ কথাটি আজ বাস্তবে পরিলক্ষিত হয়েছে। একদিন বাহালুল পাগল বলেছিলেন দুই লক্ষ টাকা হলে বেহেস্ত কেনা যায়। সেদিন তাঁর কথাটি কেউ গরুত্ব দেননি। কারণ সবাই ভেবেছিলেন বাহালুল পাগল। তাঁর কথার কি দাম আছে। তাই বলে তার কথাটি সমাজে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তা বাস্তবে রুপ নিয়েছে।
আজ তাইতো দেখছি, ধনীক শ্রেনীরা ফজর নামাজ জামাত ধরতে মক্কা মদিনায় যাচ্ছেন। মাসে মাসে ওমরা করছেন। স্ত্রী পরিবারের বাজার করতে বিদেশে যাচ্ছেন। পরের টাকা নিজের বলে খরচ করেছেন। দুই হাতে উড়াচ্ছেন। অকাতরে দান করে যাচ্ছেন। দানবীর খাতায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। সমাজে তাকে গরীবের বন্ধু বলা হয়। ওয়াজ মাহফিলসহ যে কোন সামাজিক কাজের সভাপতির আসন দেয়া হয়। এমনকি সভা-মঞ্চে তাকে দেয়া হয় সভাপতির চেয়ার। কারণ তার টাকা আছে। তিনি অনুষ্ঠানের সকল খরচ বহন করেছেন।
টাকা এমন একটি মাধ্যম। টাকা না থাকলে গর্বধারনী মা সন্তানকে ভুলে যান। সংসারে যিনি টাকা রোজগার বেশী করতে পারে ঐ সংসারে তার কদর বেশী। টাকা না থাকলে সমাজে তার কোন দাম থাকে না। এমন কি নিজ ঘরে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের কাছে দাম থাকে না। যার টাকা আছে সে সমাজের মসজিদ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।, গ্রাম্য শালিসের প্রধান অথিতি বনে যান। এক কথায় সকলেই তাকে শ্রদ্ধা করে, ভক্তি করে।
ধনীদের অর্থ আছে, তারা সমাজের রূপ পরিবর্তন করতে পারেন। সমাজের রিক্সাওয়ালা, ঠেলাগাড়ীওয়ালা থেকে ছোট বড় সবাই তাকে সমীহ করে, শ্রদ্ধা করে। সমাজে ছোট-খাটো কোন কাজ কর্ম হলে প্রথমেই তার ডাক পড়ে, তার থেকে জিজ্ঞেস করে কাজটি শুরু করে থাকে। তার থেকে বুদ্ধি নেন, তার থেকে দিক নির্দেশনা নেন। শিক্ষা দ্বিক্ষা না থাকলেও স্কুলের সভাপতি বানানো হয়। কারণ তার টাকা আছে।
টাকা থাকলে যেকোন অন্যায় করে পার পাওয়া যায়। কারণ তার টাকা আছে। অন্যায় করে থানায় মামলা করা যায়। পক্ষান্তরে ন্যায় কাজ করেও থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয় না। তাইতো সমাজে টাকা ছাড়া কোন কিছু চিন্তা করা যায় না। টাকা বিকল্প শুধু টাকা।
যে কোন মামলা মকদ্দমায় লড়তে হলে টাকার বিকল্প নাই। টাকা থাকলে দেশের বড় বড় নামকরা আইনজীবি রাখা যায়। আইনজ্ঞদের যুক্তি-তর্কে আইন ধনীদের পক্ষে যায়। গরীব টাকা নেই তারা শুধু ঢুকরে কাঁদে, কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
মাওলানা সাহেব কি কখনো প্রশ্ন করেছেন এই টাকার উৎস কি? না কখনই প্রশ্ন করা হবে না। কারণ তিনিতো মাওলানা সাহেবের মাদ্রাসার বড় দানকারী। মাসে মাসে চালের বস্তা, গরুর গোসত, ডাল-তেল সবই দান করেন। তাকে কি প্রশ্ন করা যায়? সেতো মাওলানার কাছে গাভী গরু। কারণ রাত পোহালেই দুধ দেয়।
কোন এক সন্ত্রাসী ঢাকা শহরে সাধারণ মানুষের টাকা পয়সা, জমি জামা লুটতরাজ করে তার গ্রামের বাড়ীতে বড় মসজিদ, বড় মাদ্রাসা, সাধারণ মানুষের মেয়ে ছেলের বিয়েতে অকাতরে দান করেছেন। লোকটার অপকর্মের জন্য যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়লো তখন তার গ্রামের বাড়ীর মুসজিদে মসজিদে দোয়া করা হয়েছে লোকটি যেন দ্রুত মক্তি পায়। প্রশ্ন হলো কেন তাকে পুলিশে ধরলো কেনই বা তার বিরুদ্ধে মামলা হলো কেউ কিন্তু জিজ্ঞাসা করেনি। হুজুর দোয়া করছে সবাই দোয়া করছে। মুদ্দা কথা টাকা মানুষকে অন্ধ বানিয়ে দেয়। টাকার পেছনে সময় ব্যয় করে।
মুদ্দা কথা টাকা এমন একটা পণ্য যে পণ্য না পেলে মা সন্তানকে ভুলে যায়। ভাই ভাইকে ভুলে যায়, বাবা সন্তানকে ভুলে যায়। এমনকি টাকা না থাকলে মহব্বতের স্ত্রীও স্বামীকে ছেড়ে চলে যায়, সন্তান পিতাকে ভুলে যায়। সমাজ তাকে দাম দেয় না। টাকা কাঠের পুতুলও হ্যাঁ করে। তাই পৃথিবীতে টাকা টাকা টাকা আর টাকা।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম একান্ত সচিব, চেয়ারপারসন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ।