মোঃ রফিকুল ইসলাম

প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে কেটে গেল ২০২০। নতুন করে সকলকে ২০২১ ইংরেজী নভবর্ষের শুভেচ্ছা। আবার শুরু করতে যাচ্ছি প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি। জীবনে বেঁচে থাকার প্রাপ্তি সুখ-দুঃখ দুটোই জীবনে চলার সাথী। জীবন থেকে কোনটাই বাদ দেয়ার মত নয়। তবে সকলকেই চেষ্টা করতে হবে অন্দকার পরিহার করে আলোর পথ বেছে নিতে হবে। এবং মনের থেকে দূর করতে হবে ২০২০-এর দুঃখ, কষ্ট, দুর্ভোগ যেন জীবনে না আসতে পারে সেই দিকে দৃষ্টি রেখেই এগুতে হবে সামনের দিকে। সবাই সবার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে অতীতের দুঃখভরা দিনগুলি যেন ফিরে না আসে। সবাই যেন সামনের দিকে সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে পারি সেই সফল চেষ্টায় নিজেকে সোপর্দ করতে হবে। তাই ২০২১ সাল হউক প্রতিটি সমাজ তথা প্রতিটি মানুষ যেন নির্যাতনমুক্ত থাকতে পারে সেই প্রত্যাশা সকলের কাছে।
খবরের কাগজে চোখ মিলাতেই দেখা যায় ধর্ষণ আর ধর্ষণ। সবারই জিজ্ঞাসা এমনটা কেন হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কেউ এটার সঠিকতা জানে না বা কেউ সঠিকতার চিন্তাও করে না। আমরা যে জাতির থেকে এলাম সে জাতিকেই হেয় প্রতিপন্ন করে সমাজে যার দ্বারা ধর্ষিত হলেন তাকে কেউ কিন্তু ঘৃনার চোখে দেখে না। সবাই নারীকে নিয়ে মাঠে, ঘাটে, হোটেলে বসে মুখরোচক গল্প বানিয়ে কথা বলে। কিন্ত কেন এটা হলো বা এটার মুলে কে রয়েছে বা কেনই বা এটা করা হচ্ছে। তার শিকরে যেতে হবে তার মুল উতপাটন করতে হবে কেউ সেটা বলে না শুধুই নারীর দোষ, নারীর অন্যায় কেন নারী মাতায় ওড়না দিয়ে বের হলো না, কেন রাস্তায় এলো ইত্যাদি বিষয় সবার মুখে চোখে।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরিসরে যতটুকুন উদঘাটন করতে পেরেছি বা আমার জ্ঞানে ধরেছে সেটা কিঞ্চিত আলোকপাত করতে যাচ্ছি। সেটা হালো:- আজকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে বিষক্ত গ্যাস প্রবাহিত হচ্ছে তা জানতে হবে। আজকে পাড়ায় মহল্যায় যুব সমাজ নষ্ট হচ্ছে এর কারণ কি? যারা সমাজের সমাজপতি তারা কি এর কোন খোঁজ নিয়েছেন, নিশ্চয়ই না । সমাজে কেউ নষ্ট হলে তার সমালোচনা সবাই করি কিন্তু কেন সে নষ্ট হলো তার মুল পর্যালোচনা করি না। মুল নিয়ে কোন ভাবনা নেই আমাদের। আমরা হুজুগে সবাই লাফ-যোফ দিচ্ছি।
যুব সমাজকে নষ্ট হওয়ার পেছনে রয়েছে দুটো জিনিস (১) মাদক (২) ইন্টারনেট। আজকে আমরা স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি। স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার করা ভাল। কিন্তু এর ব্যবহারে আমরা নৈতিকতা হারিয়ে ফেলেছি। কারণ এখানে ইউটিউব এবং নীল ছবির ছরাছরি। এটা দেখতে দেখতে যুব সমাজ আজ ধ্বংশের দ্বাড় প্রান্তে। মাদক এবং নীল ছবি একে অপরের সাথে জড়িত। তাই আজকের সমাজে অহরহ নারী ধর্ষণ চলছেই। এছাড়া খবরের কাগজ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই দেখা যায় ছেলের হাতে বাবা-মা খুন। এর পেছনেও রয়েছে মাদক। কারণ মাদকের টাকা সময়মত না পেলে মাদক সেবিদের জ্ঞান থাকে না। ফলে ওরা যেকোন কাজ করে ফেলতে দ্বিধাবোধ করে না। এর থেকে বাঁচতে হলে ইন্টারনেট থেকে যাতে স্মার্ট মোবাইল ফোনে নীল ছবি ডুকতে না পারে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাজ থেকে মাদক দূর করতে হবে। অন্যথায় দেশের যুব সমাজকে রক্ষা করা যাবে না।
নেট দুনিয়ায় ফেসবুক নিয়ে অনেকেই অনেক ধরণের সমালোচনা আলোচনা করা হয়েছে, কখনো মুখ খোলেননি, কিন্তু ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ নিজেই নিজের সৃষ্টির সমালোচনা করে বলেছেন ফেসবুক সমাজকে বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি করেছে। এছাড়াও ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট চামাখ পালিপিতিয়াও বলেছেন ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করা ভয়ঙ্কর ভুল। তিনি তার সন্তানকে ফেসবুক ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তারা আরও বলেছেন ফেসবুক তৈরী করা হয়েছিল সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তবে আজ তারা অনুভব করেছেন এই ফেসবুক হলো ‘ভয়ংকর ভুল’। তাদের এই ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে বর্তমান সমাজ এক কঠিন দিন পার করে যাচ্ছে। তারা এও ভাবছেন কীভাবে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা নিয়ে তারা বিকল্প চিন্তা করে যাচ্ছেন। পরিশেষে তারা মহান আল্লাহ-তায়ালার উপর ভরসা রেখেছেন।
আমরা অসহায় নই, আমরা মহান আল্লাহর পাশাপাশি আমাদের নিজেদের ভাগ্যের নির্ধারণকারী। আল্লাহ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, জ্ঞান, বুদ্ধি, ভাল, খারাপ শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি অদৃশ্য থেকেই আমাদের কাজে কর্মে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন, আমরা শুধু বাছাই করে সঠিক সময় সঠিকভাবে কাজটি এগিয়ে নেই। সৃষ্টির শুরুতেই আমাদের কাজের ডিজাইন করা হয়েছে আমরা শুধু সৃজনশীল চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে আমাদের জীবনকে পরিচালিত করি।
ভবিষ্যত প্রজন্মের দিকে চিন্তা করে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে প্রার্থনা নেট থেকে ইউটিউব, অশালীন নীল ছবি প্রত্যাহার করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন।
আমাদের সকলের মনে রাখতে হবে আমার দাদার থেকে আমার বাবা, বাবার থেকে আমরা, আমার থেকে আমার সন্তান এবং আমার সন্তানের থেকে আমার নাতি-পুতি ধারাবাহিকভাবে আসছে। দাদা কষ্ট হলেও সঞ্চয় করে আমার বাবার জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করে গেছেন। আমার বাবাও আমার জন্য কিছু করে গেছেন ঠিক আমিও আমার সন্তানের জন্য কিছু একটা করে যাবো সেই প্রত্যাশা নিয়েই সামনের দিকে এগুচ্ছি।
বর্তমান প্রজন্মের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে তা পরিহার করে কিভাবে ভবিষ্যত প্রজন্মেরা বাস করবে এবং পৃথিবীর মানুষের কাছ থেকে উত্তরাধিকারী প্রাপ্ত হবে। এই ধারণাকে টেকসই বিকাশের অংশ হিসাবে টেকসই উন্নয়ন যা বর্তমানের চাহিদা মেটাচ্ছে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা মেটাতে সক্ষমতার সাথে কাজ করবে।
ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাচিয়ে রাখতে হলে বর্তমানে যারা আছেন তাদের উপর অনেক দায়-ভার এবং দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিশ্বে বসবাসরত যে সকল প্রাণি ও উদ্ভিদ রয়েছে তাদেরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব মানবজাতির উপর বর্তাচ্ছে। এছাড়া বর্তমান প্রজন্ম ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এমন একটি দুনিয়া ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম ঠিকভাবে বসবাস করতে পারে। সেই দিকে সবাইকে যতœশীল হতে হবে।
আমরা যারা বর্তমানে বসবাস করছি এটা কিন্তু আমাদের তৈরী নয় । আমরা উত্তরাধিকা সূত্রে পেয়েছি এবং সুবিধামত ভোগ বিলাস করছি। তদরূপ ভবিষ্যত প্রজন্মও আমাদের থেকে আশা করবে ঠিক আমরা যা পেয়েছি। প্রাকৃতি সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যবহার করা, ক্ষতিকারক পরিবর্তনগুলি পরিহার করা। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি পৃথিবীর ক্ষতির দিকগুলি ত্যাগ করতে হবে।
মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি যথাযোগ্য সম্মানের সাথে বর্তমান প্রজন্মকে মানবজাতির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদেরকে সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। ইউটিউবের কালো করাল থাবা থেকে ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাচিয়ে রাখতে হলে ইউটিউবের নীল ছবি যাতে টাস মোবাইলে না আসে তা নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যত অন্দকার এবং আদি যুগে ধাবিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিঃ দ্রঃ লেখা লেখকের নিজস্ব। এর সাথে বিপ্লবী সংবাদের কোন সংশ্লিষ্ঠতা নেই।