চট্টগ্রামে জেসমিনকে খুন করে ঝোপে লুকিয়ে রাখে স্বামী। পারিবারিক কলহ ও অর্থনৈতিক হতাশা থেকে স্বামী ফরহাদ হোসেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিনকে গলাটিপে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করে ফরহাদের মামা সেলিম প্রকাশ অজিউল্লাহ। এ ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করেছে আকবরশাহ থানা পুলিশ। এদের মধ্যে ফরহাদকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ও সেলিমকে আকবরশাহ থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ রোববার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানায়। নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকায় অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের প্রায় এক মাস পর ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার সময় ফরহাদকে সহযোগিতা করে তার মামা সেলিম প্রকাশ। শনিবার সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে হাজির করলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ২ অক্টোবর নগরীর আকবরশাহ থানাধীন হারবাতলী গ্যাসলাইন এলাকায় ঝোপের মধ্য থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্তে লাশের পরিচয় ও হত্যা রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, জেসমিন বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফরহাদের পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের একপর্যায়ে তারা বিয়ে করে। পরে ফরহাদ দুই সংসার সামলাতে হিমশিম খায়। ফরহাদের সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ের বিষয়টি তার প্রথম স্ত্রী জেনে গেলে সংসারে অশান্তি আরও বেড়ে যায়।
অপরদিকে জেসমিনের আগের সংসারে ২ ছেলে, ১ মেয়ে রয়েছে। এ নিয়ে ফরহাদ হতাশ হয়ে যায় ও জেসমিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে ফরহাদ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় ফরহাদ তার মামা সেলিমের বাসায় যায়। পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় ফরহাদ জেসমিনকে তার মামার বাসার নিচে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। এ সময় ফরহাদ তার মামা সেলিমকে ঘটনাস্থলে আসতে বলে। তার মামা ঘটনাস্থলে এসে ফরহাদ ও জেসমিনের মধ্যে ধস্তাধস্তি দেখতে পায়। ফরহাদ তার মামাকে সহযোগিতা করতে বলে। পরে দুজন মিলে জেসমিনকে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে দুজন মিলে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। এরপর ফরহাদ পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে যায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২ অক্টোবর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম লাশ দাফন করে। লাশ পাওয়ার পর একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ ছায়েম ঘটনাস্থলের ঝোপঝাড় পরিচ্ছন্ন করে চান্দগাঁও থানাধীন মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রা.) লিমিটেডে চাকরির একটি পরিচয়পত্র, এক জোড়া স্যান্ডেল, একটি ভ্যানিটি ব্যাগ ও ব্যাগের মধ্যে থাকা অন্য জিনিসপত্র উদ্ধার করেন। ১০ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মামলার বাদী জেসমিনের ভাই মনির হোসেন শনাক্ত করেন এটি জেসমিনের লাশ। পরে মনির হোসেন ১৯ অক্টোবর বাদী হয়ে আকবরশাহ থানায় মামলা করেন। আকবরশাহ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল হক মিডিয়াকে বলেন, অজ্ঞাতনামা অর্ধগলিত লাশের পরিচয় ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।