Monday, June 23, 2025
Homeশীর্ষ সংবাদসাংবাদিকের অপ্রকাশিত কথা (পর্ব ১১)

সাংবাদিকের অপ্রকাশিত কথা (পর্ব ১১)

মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন

১৯৯১ সালের এক রবিবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে লালমোহন থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এক বয়বৃদ্ধ লোক আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন পুলিশের এসআই আমির হোসেন বললেন, আপনি নাকি সাংবাদিক? আমি বললাম জি। বললেন, বাবজান আমি একটা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পরেছি, আপনি আমাকে একটু সাহায্য করবেন? আমি তাকে নিয়ে পলাশ ষ্টুডিওতে গেলাম এবং তার কথা শুনলাম। তিনি বললেন আমার জমি আত্মসাৎ করার জন্য আমার এক ভাতিজা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। আমাকে এই মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচাতে একটা সত্য সংবাদের প্রয়োজন। বাবা তুমি আমাকে একটু বাচাও। আমি তার মামলার কপি নিয়ে পড়লাম এবং সংবাদ লেখার আশ্বাস দিলাম। বয়বৃদ্ধ লোকটি আমাকে ১০০ টাকার ৩টা নোট দিয়ে বলল, বাবা এটা তোমার সংবাদ লেখার খরচ। আমি ৩০০ টাকা নিয়ে বললাম চাচা এই টাকায় হবে না, আইন আদালতের বিষয়, আমাকে ৫০০ টাকা দিতে হবে। এই কথা শুনে বয়বৃদ্ধ লোকটির মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আমি সেই দিকে কোন নজরই দিলাম না। বয়বৃদ্ধ লোকটি আচ্ছা, আমি টাকা নিয়ে আসছি বলেই পলাশ ষ্টুডিও হতে বের হয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পর বয়বৃদ্ধ লোকটি ফিরে এলেন এবং আমাকে আর ২০০ টাকা দিয়ে চলে গেলেন। পলাশ ষ্টুডিওর মালিক গনেশ বাবুর আবদার রক্ষা করতে আরজু হোটেলের বিখ্যাত পেটিশ এনে আমি গনেশ বাবু এবং বাবুল ফার্মেসীর মালিক স্বর্গীয় বলহরি বাবু এবং বন্ধু প্রদীপ পেটিশ খেলাম। বাসায় যাওয়ার পথে ভূমি অফিসের সামনের প্রয়াত নিতাইয়ের টেইলার হতে একটা প্যান্ট পিচ কিনে ৮০ টাকা মুজুরী দিয়ে বানাতে দিলাম।   

আমি বয়বৃদ্ধ লোকটির পক্ষে একটা সংবাদ সাপ্তাহীক ভোলাবানী ও দৈনিক প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করলাম। বয়বৃদ্ধ লোকটি আমার সংবাদ আদালতে জমা দিয়ে মামলা থেকে অব্যহতি পাওয়ার পর আমার সাথে দেখা করলেন। এবং আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। ৩ দিন পর আমি বয়বৃদ্ধ লোকের দেয়া টাকা দিয়ে বানানো প্যান্ট পড়ে বিকালে বাজারের উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হলাম। তখন চরফ্যাশন হতে ভোলাগামী বাস আঁখি ষ্টুডিওর সামনে কিছুক্ষনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকত। আমি ভোলাগামী দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাসে বসে ধুমপান করা এক লোকের সিগারেটের আগুন আমার পেন্টের উপর পড়ল এবং আমার প্যান্টটা পুড়ে গেলো। আমার শরীরের সামান্য কিছু অংশও পুড়ে গেল। পোড়া প্যান্ট নিয়ে পলাশ ষ্টুডিওতে গেলাম। গনেশ বাবু মজা করেই সত্য কথাটাই বলে ফেললেন, লোকটার টাকাটা দি‌তে খুব কষ্ট হ‌য়ে‌ছে, অবৈধ টাকার প্যান্টতো তাই এভাবে পড়ার প্রথম দিনেই পুড়ে নষ্ট হয়ে গেল। বলহরি বাবু আমার শরীরের পোড়া অংশে মলম লাগিয়ে দিলেন। গনেশ দাদার কথা শুনার পর বয়বৃদ্ধ সেই লোকের ৫০০ টাকা চাওয়ার সময়কার মলিন মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। সেই থেকে প্রতিজ্ঞ করি, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কোন নিরপরাধ মানুষের মনে কষ্ট দেবনা। সংবাদ লেখার নাম করে কাহারো কাছ থেকে কোন টাকা নেব না। আদর্শ নিষ্ঠা ও সততার সাথে সাংবাদিকতা করব।

১৯৯১ সাল থেকে আদর্শ নিষ্ঠা ও সততার সাথে আজও সাংবিাদিকতা করেছি, বর্তমানে করছি এবং ভবিষ্যতে করে যাব ইনশাআল্লাহ। (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য