সাংবাদিকের অপ্রকাশিত কথা (ছয়)

মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন

লালমোহন উপজেলা পরিষদের রেড় ক্রিসেন্টের আমি একজন স্বেচ্ছাসেবক, আমার টিমের প্রধান হচ্ছেন জনাব এ কে এম কামরুল ইসলাম (ফারুক)। যিনি সম্প্রতি বরিশাল বিভাগের শ্রেষ্ট টিম লিডার হিসাবে প্রথানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বর্ন পদক ও অন্যান্য পুরম্কার পেয়েছেন।

১৯৯০ সালের কোন একদিন রেড ক্রিসেন্ট অফিসে গেলাম একটি সংবাদ সংগ্রহ করতে।উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসের সামনে আসার পর আমার প্রাথমিক ‍বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক এবং লালমোহন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মসজিদের ইমাম জনাব মোঃ নুরুল ইসলাম মাওলানা স্যারের সাথে দেখা। তাকে দেখে সালাম দিলাম। কিন্তু দেখলাম তার চেহারায় হতাশা। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, তিনি অবসরে আছেন। উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসে তার পেনশনের ফাইলটা আটকে আছে। তিনি জানালেন হিসাব রক্ষন অফিসের এক কর্মকর্তা তার ফাইলের জন্য ৫,০০০/- টাকা ঘুষ চাইছে, তিনি ১,০০০/- দিয়েছেন। তারপরর ও দীর্ঘ দুই মাস এই অফিসে আসছেন আর বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। তার ফাইলটা নড়ছে না।

আমি তাকে নিয়ে হিসাব রক্ষন অফিসের সেই ঘুষ গ্রহনকারীর কাছে গেলাম এবং সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মোঃ নুরুল ইসলাম মাওলানা স্যারের বিষয়টি জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন। আমি প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তাকে ঘুষ নেয়া এবং এভাবে একজন শিক্ষকের ফাইল আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি ঘুষ গ্রহনকারীকে তার কক্ষে ডাকলেন এবং ধমক দিয়ে বকাঝকা করে ৩০ মিনিটের মধ্যে মোঃ নুরুল ইসলাম মাওলানা স্যারের ফাইল এ কাজ সম্পন্ন করে ঘুষ নেয়া টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। আমি আমার কাজ শেষ করে আবার হিসাব রক্ষন অফিসে আসার পর দেখলাম, স্যার অফিসের সামনে বসে আছে। আমাকে দেখে আমার কাছে এগিয়ে এসে  আমার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি তোমার জন্য এতক্ষন অপেক্ষা করেছি। আমি পেনশনের টাকা পেয়ে গেছি এবং ঘুষের টাকাও ফেরত পেয়েছি। আমার কাজটা করে দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ এবং দোয়া করি, আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। স্যার বললেন, আমাকে মসজিদে জোহরের নামাজ পড়াতে হবে আমি এখন আসি। আমি স্যারকে রিক্সা কিরে দিতে চাইলাম তিনি রাজি হলেন না, বললেন বাবা তুমি তোমার কাজে যাও, আমি রিক্সা করে নিতে পারব। মোঃ নুরুল ইসলাম মাওলানা স্যার অনেক আগে মারা গেছেন। আমি স্যারের আত্মার শান্তি কামনা করি।     (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here