Monday, June 23, 2025
Homeশীর্ষ সংবাদসাংবাদিকের অপ্রকাশিত কথা (১৫) “চরফ্যাশন হাসপাতাল”

সাংবাদিকের অপ্রকাশিত কথা (১৫) “চরফ্যাশন হাসপাতাল”

মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন

১৯৯৪ সালের একদিন বিকেলে বাজারের উদ্দ্যেশে বের হই। বাসার সামনের রাস্তায় দেখা হলো বন্ধু সুভাসের সাথে। আমি বরিশাল বি এম কলেজে অনার্সে পড়ছি আর সুভাস বি এম কলেজে বিএসসিতে পড়ছে। সুভাস আমাকে দেখেই আন্তারিকতার সাথে বুকে জরিয়ে নিলো। সুভাস জানালো তার বাবা ও মা দু‘জনই চরফ্যাশন হাসপাতালে চাকুরী করত। তিন মাস আগে লালমোহন হাসপাতালে বদলী হয়ে এসেছে। তারা হাসপাতাল কোয়াটারে থাকে। আমাকে একটা রিক্সা করে তার বাসায় নিয়ে গেলো।

বাসায় গিয়ে দেখলাম বাবা মা আর সুভাস এই ৩ জনের সংসার। সুভাস আমাকে তার বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি দেখলাম তারা দু‘জনই মন খারাপ করে বসে আছে। জানতে চাইলাম মন খারাপ কেন। সুভাস জানালো তার বাবা ও মা ৩ মাস আগে চরফ্যাশন হাসপাতাল হতে বদলী হয়ে এসেছে কিন্তু তাদের বদলী জনিত কাগজপত্র লালমোহন হাসপাতালে না পাঠানোর কারণে তার বেতন পাচ্ছে না। তাই মন খারাপ। চরফ্যাশন হাসপাতালের হিসাব রক্ষক ৫০০০ টাকা ঘুষ চেয়েছে। তারা ৫০০ টাকা দিয়ে বলেছে কজ শেষ করলে আরু টাকা দিবে। কিন্তু ৩ মাসে কোন কোন কাজ হয়নি।

আমি বিস্তারিত শুনে ভোলা তৎকালীন প্রভাবশালী সাপ্তাহীক সাপ্তাহিক ভোলাবানী পত্রিকায় চরফ্যাশন হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে সংবাদ পাঠাই। মরহুম সম্পাদক আবু সফিয়ান ভাই সংবাদটি তখন খুবই গুরুত্ব দিয়ে প্রথম পাতায় প্রকাশ করে। সংবাদটি খবু আলোরন করে। আমি সংবাদ প্রকাশের পর সুভাসের বাবা ও মাকে আবার চরফ্যাশন হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের কাছে যেতে বলি। তারা চরফ্যাশন থেকে এসে জানালেন, চরফ্যাশন হাসপাতালের হিসাব রক্ষক তার সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় তাদের সাথে খারাপ আচোরন করে।

আমি পরের দিন সুভাসের বাবা মাকে নিয়ে আবার চরফ্যাশন যাই। তাদের কিছু কথা শিখিয়ে দিয়ে চরফ্যাশন হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের কাছে যেতে বলি। আমি হিসাব রক্ষকের রুমের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের ভেতরে গিয়ে হিসাবে রক্ষকের সাখে কথা বলতে বলি। আমার সাথে থাকা মিনি টেপ রেকর্ডার অন করে আমি তাদের কথোপকথন রেকর্ড করি। এক সময় হিসাব রক্ষক তাদের বলেন, তোমরা আমার বিরুদ্ধে যে সাংবাদিকের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করিয়েছো তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেও আমি করব না। সুভাসের বাবা আমার কথা মত হিসাবরক্ষককে কাজের জন্য ৫০০০ টাকা চেয়েছেন আমি ৫০০ টাকা দিয়েছি এ কথা উল্লেখ করেন। এতে হিসাব রক্ষক আর ও ক্ষেপে যান। হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা বলেন, আপনারা সাংবাদিকের কাছে যান, আমার কাছে কেন এসেছেন? সাংবাদিককে বলেন আপনাদের কাজ করে দিতে। এ কথা শুনে আমি চরফ্যাশন হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের রুমে যাই এবং জানতে চাই, ভাই কি হয়েছে? আমার প্রশ্ন শুনে হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা আমার উপর চটে গেলেন, আপনি কে? অনুমতি না নিয়ে আমার রুমে কেন ডুকেছেন? আমার রুম থেকে বের হন।

ঠিক এই সময় হাসপাতালের থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মরহুম ডাঃ মুজিবুর রহমান এর পিয়ন এসে হিসাব রক্ষকের রুমে ডুকে  আমাকে বললে, আপনি কি সাংবাদিক সোয়েব, আপনাকে টিএইচ স্যার সালাম জানিয়েছে।এ কথা শুনে হিসাব রক্ষক কর্মকর্তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। সে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি বললাম, আপনি স্যারকে গিয়ে বলেন, আমি আসছি। আমি হিসাব রক্ষক কর্মকর্তাকে বললাম, দুজন কর্মচারী ৩ মাস আগে বদলী হয়েছে আজ ও আপনি তাদের বদলীর কাগজ পাঠাননি, তারা বেতন পাচ্ছেন না। আপনি তাদের ঘুরাচ্ছেন। আপনাকে ঘুষ দেওয়ার পরও কেন কাজ করছেন না। ঠিক আছে সাংবাদিক কি করতে পারে আপনি তা দেখবেন।টিএইচ স্যারের পিয়ন আবারও এসে আমার টিএইচ স্যারের কথা বললেন। আমি টিএইচ স্যারের রুমে গিয়ে স্যারকে সালাম দিলাম। তিনি আমাকে বকলেন, বললেন আমি থাকতে তোমার এ নিউজ করা উচিত হয়নি। আমাকে ফোন করে বললেই হতো, নিউজ করার কোন দরকার ছিলনা। তিনি হিসাব রক্ষক কর্মকর্তাকে ডেকে পাঠালেন। টিএইচ স্যার আমার কাছে থেকে সব শুনলেন। পরে প্রথমে হিসাব রক্ষক কর্মকর্তাকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। হিসাব রক্ষক কর্মকর্তাকে আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন।  তার পর সুভাসের বাবা মায়ের বদলীর কাগজ ৫ মিনিটের মধ্যে তৈরী করে আজকেই লালমোহন হাসপাতালে পাঠাতে বললেন। এবং সুভাসের বাবার কাছ থেকে নেয়া ঘুষের ৫০০ টাকা ফেরত দিতে বললেন।অতঃপর হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা তাই করলেন। (চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য