শাহীন কামাল :
মানুষ হিসেবে অন্যের সাহায্য খুব একটা করতে না পারলেও উপদেশ দানে আমাদের জুড়ি নেই বরং আগ বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় পরামর্শ দানে আমরা খুবই পারঙ্গম। এদেশে রোগীর চেয়ে ডাক্তার বহুগুণ বেশি। কেউ অসুখে পড়লেই দেখা যায় কতজন কতভাবে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছে। অবশ্য এবিষয়ে অনেক উপদেশ পেলেও সিদ্ধান্ত নেওয়াতে আমরা ডাক্তারের ডিগ্রি, কার্যকাল, অভিজ্ঞতা, কর্মস্থল, পুরাতন হিস্ট্রি এমনকি ব্যক্তিজীবনও দেখি, দেখতে হয়। আমার এক স্বজন বেশ কয়েকবছর বলেছিল, ডাক্তারকে না জানিয়ে একটা প্যারাসিটামলও খাবেন না। ইদানীং সেটা মেইনটেইন করতে চেষ্টা করছি। কোন বিষয়ে ডাক্তারের উপর ডিপেন্ড না করতে পারলে অন্য ডাক্তার দেখাই। সেখানেও তৃপ্ত না হলে তৃতীয়জনের কাছে যাই। তখন সিদ্ধান্ত নেই। প্রয়োজনে বোর্ড বসাই। নিজের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, প্রত্যাশা, সহজিকরণ বিবেচনায় না নিয়ে অধিকতর যোগ্য, অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নেই।
ডাক্তারদের কোন বিষয়ে দ্বিমতকে ভিন্ন চোখে না দেখে স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেই। গুগল সার্চ কিংবা চটি বই কিনে, চিকিৎসা করেন এমন কেউ আছেন? নিজের সুবিধার জন্য ভুয়া ডাক্তারের উপর নির্ভর করেন, এমন বেকুব একজনও নেই।
ধর্মীয় বিষয়ে কোন প্রশ্নের উদয় হলে মুফতি, মুহাদ্দিসের অভাব নেই সমাজে। ইসলাম যার জীবনে নাই, এ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনও করেনি কখনও তারাও জটিল বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুবিধাবাদী পন্ডিতের মতামত নিচ্ছেন কেউকেউ।
এ বিষয়ে অধিকতর বিষয়ভিত্তিক যোগ্য, অভিজ্ঞ, শিক্ষিত ব্যক্তির পরিবর্তে ভুয়া ডাক্তারের মতো টাউন মৌলভিদের মতামত ইচ্ছাকৃত গ্রহণ করে সত্যিকার আলেমদের কথাকে এড়িয়ে যাওয়াও এক ধরনের টাউটারি। চিকিৎসা বিষয় আমাদের সচেতনতা যথেষ্ট থাকলেও ধর্মীয়সংক্রান্ত বিষয়ে সবাই কেমন যেন কৌশল অবলম্বন করেন। অনেকটা ইচ্ছামতো ব্যাসার্ধ নিয়ে বৃত্ত আঁকার মতো। আমার সন্তানসম সদ্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে কুণ্ঠিত হইনা। অবলীলায় পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই। তাইলে ধর্মীয় বিষয়ে নিজের পাণ্ডিত্য জাহির না করে অভিজ্ঞজনের কথা মেনে নেয়াইতো যৌক্তিক।
লেখকঃ শিক্ষক, সাংবাদিক


















