চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা চাকরিতে পুনর্বহালসহ ৮ দফা দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন । গতকাল মঙ্গলবার শহীদ মিনারে তারা ঘোষণা দেন, বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ১২টার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
এদিকে রাস্তায় অবস্থান নেওয়া বিক্ষুব্ধ বিডিআর সদস্যরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘তুমি কে আমি কে, বিডিআর বিডিআর’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’- ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী সরকারের সিদ্ধান্ত না পেয়ে আজ ১২টার পর সচিবালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন তারা। এরপরই সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে শিক্ষাভবনের সামনে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন বিডিআর সদস্যরা। তবে সেই বাধা উপেক্ষা করেই সচিবালয়ের রাস্তায় বসে পড়েন তারা।
এতে বিকেল পৌনে ৩টা পর্যন্তও সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে শিক্ষাভবন মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিডিআর সদস্যরা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দফা দাবি মানা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলমান থাকবে। চাকরি পুনর্বহালের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত সড়কেই সবাই অবস্থান করবে। আমাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সচিবালয়ে আমরা ন্যায়সংগত অধিকার আদায় করতে এসেছি।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। এ সময় তাকে ‘বিজিবি না বিডিআর, বিডিআর বিডিআর’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
পরে তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কোনো প্রতিনিধি না আসবে কিংবা কোনো আশ্বাস না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে অবস্থান চলবে। এর আগে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ৬ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন বিডিআর কল্যাণ পরিষদ। বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১. পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসব বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ২. এরই মধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিস্ফোরক মামলা বাতিল করতে হবে।
৩. গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ব্যতীত শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (ঙ) নং ধারা বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাধীন তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৪. পিলখানায় শহীদ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ সর্বমোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে কারাগারে মারা যাওয়া সব বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করতে হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৫. স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনতে হবে। ৬. পিলখানার হত্যাকাণ্ডে সব শহীদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে শহীদদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।