
জাহিদ দুলাল, লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি:
লালমোহন-তজুমদ্দিনের নদী ভাঙ্গন রোধে ভোলা জেলার সবচেয়ে বড় বাজেটের প্রকল্প পাস হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক)। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনান্য প্রকল্পের মধ্যে তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলায় উপকূলীয় বাঁধ পুনর্বাসন, নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষণে ১ হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লালমোহন ও তজুমদ্দিনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন এর একান্ত প্রচেষ্টায় তার নির্বাচনী এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধের জন্য এ প্রকল্পটি পাস করতে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কাজ করেছেন।
এরপূর্বে সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের আমন্ত্রণে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীমসহ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা লালমোহন ও তজুমদ্দিনের মেঘনার ভাঙ্গন কবলিত তীর পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি হবে ভোলা জেলার নদী ভাঙ্গন রোধের কাজের জন্য সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ১ হাজার ৯৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার প্রকল্পটি ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সম্ভাবতা যাচাই বাছাই শেষে একনেক সভায় মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) চুড়ান্ত অনুমোদন পেল। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি চরফ্যাশন ও মনপুরার নদী ভাঙ্গন রোধের জন্য ১ হাজার ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের লালমোহন (পওর উপ-বিভাগ) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, লালমোহন ও তজুমদ্দিনের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ভাঙ্গন কবলিত নদী তীর সংরক্ষণ, দৃষ্টিনন্দন পর্যবেক্ষণ পার্ক, সোলার স্ট্রিট বাতিসহ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য ১৯ টি প্যাকেজে এ প্রকল্পের কাজ হবে। তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর থেকে লালমোহন উপজেলার বেতুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩৪.৬৯০ কিলোমিটার নদী তীর, বেড়িবাঁধ উন্নয়নসহ কয়েকটি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন ভোলা-৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন। তার প্রচেস্টায় অবশেষে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছে।
প্রকল্পটির মধ্যে বেড়িবাঁধের রাস্তা ২০ ফিট চওড়া করা হবে। নদী তীর সংরক্ষণের জন্য বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। লালমোহন মঙ্গলসিকদার, গাটিয়া ও তজুমদ্দিনে ৩টি দৃষ্টিনন্দন পর্যবেক্ষণ পার্ক রয়েছে এ প্রকল্পে। এতে নদী তীর এলাকায় পর্যটকদের আগমন আরো বেশি বাড়বে। জেলেদের নৌকা তীরে ভেড়ানোর জন্য ৯টি হারবার (জেটি) নির্মাণ করা হবে। নতুন ৭টি স্লুইজ গেইট নির্মাণেরও প্রস্তাবনা রয়েছে এ প্রকল্পে। পুরো ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ৩৪৭টি সোলার স্ট্রিট বাতি বসানো হবে। এতে মেঘনার তীর থাকবে রাতের বেলায় সোলারের আলোয় আলোকিত। লালমোহনের ঐতিহ্যবাহী একটি খালের নাম বেতুয়া খাল। এক সময় ছিল এ খাল ¯্রােতস্বিনী। বড় বড় নৌকা চলত এ খাল দিয়ে, চলত ছোট ছোট যাত্রীবাহী লঞ্চ। কিন্তু কালের আবর্তে বেতুয়া খাল তার যৌবন হারিয়েছে। মরা খালে পরিণত হয়েছে বেতুয়া। বেতুয়া খালের হারানো যৌবন ফিরিয়ে আনতে ১৯ কিলোমিটার খাল খনন কাজ হবে এ প্রকল্পে।
সর্বশেষ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে লালমোহন-তজুমদ্দিনের দীর্ঘদিনের মেঘনার নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে এই এলাকার নদীর তীরবর্তী সকল শ্রেণির মানুষজন। দীর্ঘদিন ধরে মেঘনার কড়াল গ্রাসে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের স্বস্তির শেষ যায়গা হয়ে উঠবে মেঘনার বেড়িবাঁধ।
এদিকে প্রকল্পটি একনেকে পাস হওয়ায় লালমোহন-তজুমদ্দিনের মেঘনা পাড়ের মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।