Monday, June 23, 2025
Homeদেশগ্রামলালমোহনে আবুল কাশেমের কাছে ভিক্ষুকরা হলো বিশেষ মেহমান

লালমোহনে আবুল কাশেমের কাছে ভিক্ষুকরা হলো বিশেষ মেহমান

জাহিদ দুলাল , লালমোহন (ভোলা) থেকে:

ভোলার লালমোহনের খাবার হোটেল মালিক মো. আবুল কাশেম। হোটেল তালুকদার নামে তার ওই খাবার হোটেলের ব্যাপক সুপরিচিতি রয়েছে। লালমোহন পৌরশহরের চৌরাস্তা সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে একটি গলির ভেতরে তার হোটেলটির অবস্থান। যেখানে কেবল বিক্রি হয় দুপুরের খাবার। তার খাবারের কদর রয়েছে উপজেলার মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তশীলদের কাছে।

তবে হোটেল মালিক আবুল কাশেম কেবল খাবার বিক্রিই করেন না, তিনি ফ্রিতে অন্তত ৭০ থেকে ১০০ জনকে খাওয়ান। এরা কেউই স্বচ্ছল না। আবুল কাশেমের হোটেলে যারা বিনামূল্যে খান তারা সকলেই অসহায়-ভিক্ষুক। তবে হোটেল মালিক আবুল কাশেমের কাছে আসা অসহায় ভিক্ষুকরা হলেন বিশেষ মেহমান। তিনি তাদের পরম যতেœ মাছ- মাংস দিয়ে নিজের হাতে বন্টন করে খাওয়ান।

হোটেল তালুকদারের মালিক মো. আবুল কাশেম বলেন, গত ১৭ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। সে সময়ও দুপুর বেলায় হোটেলে অসহায় মানুষরা আসতেন। অনেকে খাবার খেতে চাইতেন। তখনও নিজের সাধ্যের মধ্যে খাবার দিতাম। তবে তাদের খাবার দিতে দিতে এসব অসহায় মানুষের প্রতি মায়া বাড়তে থাকে।

এরপর গত ৫ বছর ধরে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে নিয়মিত ৭০ থেকে ১০০ জন ভিক্ষুককে পেট ভরে খাবার খাওয়াই। এরা আমার কাছে বিশেষ মেহমান। সাধ্যের মধ্যে তাদের খাবার দিতে পেরে নিজেরও শান্তি লাগে। খাবারের পর অসহায় এসব মানুষের তৃপ্তির ঢেকুরে নিজেও মানসিকভাবে তৃপ্তি পাই। এই কাজ অব্যাহত রাখতে সকলের দোয়া কামনা করছি।হোটেল তালুকদারে খেতে আসা অসহায় বিবি হাজেরা, জোসনা বেগম ও ছালেহা বিবি জানান, বৃহস্পতিবার লালমোহনে হাঁটের দিন থাকে। এ জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আমরা এখানে মানুষের থেকে সহযোগিতা তুলতে আসি। বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হয়। যার জন্য বিগত বেশ কিছু মাস ধরে আমরা এই হোটেলে বিনামূল্যে দুপুরের খাবার খাই। হোটেলের মালিক আমাদের যতœ করে খাওয়ান। তার জন্য সপ্তাহে একদিন অন্তত মাছ-মাংস খেতে পারি। এই হোটেলের মালিকের জন্য আমরা দোয়া করি। হোটেল মালিক আবুল কাশেমের এমন কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্থানীয় অনেকে। তাদের মধ্যে একজন লালমোহন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, কাশেম ভাই প্রতি বৃহস্পতিবারে গরীব মানুষকে বিনামূল্যে পেট ভরে ভাত খাওয়ান। এটি লালমোহনের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কাশেম ভাইয়ের মতো সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আরো অনেক অসহায় গরীব ও হতদরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। এই মানবিক কাজের জন্য আমি কাশেম ভাইকে সাধুবাদ জানাই।লালমোহন পৌরসভার মেয়র হাজী এমদাদুল ইসলাম তুহিন জানান, হোটেল তালুকদারের মালিক আবুল কাশেম মিয়া আমার অত্যান্ত প্রিয় মানুষ। তার এই হোটেলে আমি অনেক সময় দুপুরের খাবার খাই। অনেক আগ থেকেই তিনি সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে গরীব-অসহায় মানুষের ফ্রিতে পেট ভরে খাবার খাওয়াচ্ছেন। এটি একটি মানবিক কাজ। তার এমন কর্মের জন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। একইসঙ্গে সমাজের অন্যান্য বিত্তবান লোকদেরও যার যার স্থান থেকে এ ধরনের মানবিক কাজে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য