জাহিদ দুলাল, লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি:
সংসারের একমাত্র ছেলে মো. তামজিদ। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে অসহায় বাবা-মায়ের অসচ্ছল পরিবারের হাল ধরবে। সে লক্ষ্যে পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছিল সে। ২০২৪ সালে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছিল তামজিদ। তবে ওই বছরের মে মাসে এক প্রতিবেশীর রেইনট্রি গাছে উঠে অসাবধানতাবশত পড়ে যায় সে। এতে মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাত পায় তামজিদ। এরপর তাকে দ্রুত ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয় পরিবারের সদস্যরা।
প্রতিবেশীদের দেয়া সহযোগিতায় মোটামুটি চিকিৎসা করানো হয় তার। অর্থাভাবে ছেলের পুরো চিকিৎসা করাতে পারেননি রিকশা চালক বাবা। ওই চিকিৎসার পর কয়েকদিন ভালো থাকলেও ফের মেরুদণ্ডে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। এরপর তাকে আবার ঢাকায় নেয়া হয়। ঢাকার ইসলামিয়া হাসপাতালে নিলে সেখানের চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, তামজিদের মেরুদণ্ডের পাশের হাঁড় ভেঙে রয়েছে। এ জন্য দ্রুত তার অপারেশন করতে হবে। না হয় ধীরে ধীরে তামজিদের পুরো একপাশ অবশ হয়ে সে আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবে। ওই অপারেশন করতে লাগবে ৫ লাখ টাকা। এতো টাকার কথা শুনে রিকশা চালক অসহায় বাবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। তামজিদ ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর ছকিনা এলাকার হাওলাদার বাড়ির মো. বাবুল হাওলাদারের ছেলে।
তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে তামজিদ লালমোহন ইসলামিয়া কামিল মাদরাসায় গত বছর ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ওই বছর রেইনট্রি গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার পেছনের মেরুদণ্ডের হাঁড় ভেঙে যায়। অর্থাভাবে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে তাকে পরিপূর্ণ চিকিৎসাও করাতে পারেনি। প্রতিবেশীরা যা সহযোগিতা করেছিল তা দিয়ে ছেলের মোটামুটি চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি। তবে এর কিছু দিন পর আবারো তার মেরুদণ্ডে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। যার জন্য তাকে ঢাকার ইসলামিয়া হাসপাতালে নেই। সেখানের চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, তামজিদের মেরুদণ্ডের হাঁড় পুরোপুরিভাবে ভেঙে গেছে। যার জন্য দ্রুত তাকে অপারেশন করাতে হবে। আর ওই অপারেশন করতে দরকার হবে ৫ লাখ টাকার। আমি গরিব মানুষ, এখন এতো টাকা কোথায় পাবো। আমার সম্পদ বলতে রয়েছে কেবল বসতভিটাটুকুই। আমার ছেলেকে পঙ্গুত্ব বরণ থেকে রক্ষা করতে সরকারি-বেসরকারি ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি।
তামজিদের মা মোসা. কহিনুর বেগম জানান, আমার একজন মাত্র ছেলে। সে চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। আশা ছিল আমাদের বৃদ্ধ বয়সে ছেলেটা আমাদের সংসারের হাল ধরবে। এখন তারই জীবন অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। সবাইকে আমার ছেলের পরিপূর্ণ চিকিৎসার করাতে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।
অসুস্থ মো. তামজিদ জানায়, আমাদের অভাবের সংসার। বাবা অনেক কষ্ট করে এই সংসারটি চালাচ্ছে। তাই আমার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করে কোনো একটি চাকরি নিয়ে সংসারের হাল ধরবো। এখন আমিই সংসারের বোঝা হয়ে যাচ্ছি। গাছ থেকে পড়ে আমার মেরুদণ্ডের হাঁড় ভেঙে গেছে। এরপর বাবা-মা অনেক কষ্ট করে মোটামুটি চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন আবারো মেরুদণ্ডে ব্যথা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন ৫ লাখ টাকা লাগবে। না হয় আমি আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবো। বর্তমানে আমি সোজা হয়ে হাঁটতেও পারছি না। হাঁটতে গেলে মেরুদণ্ডে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়। আমি সুস্থ হয়ে আবার পড়ালেখা করতে চাই। এরপর আমি অসহায় বাবা-মায়ের এই দুঃখ-কষ্ট দূর করতে চাই। এজন্য আমার চিকিৎসা করানো জরুরি। আর এতে অনেক টাকারও দরকার। তাই সবাইকে আমার চিকিৎসা ব্যয় বহনের জন্য আর্থিক সহযেগিতা করার বিনীত অনুরোধ করছি। আমার বাবার ০১৭৪৬৮৯০৪১৪ (নগদ) এবং ০১৮৫৯৪৮৮৫৪৩ (বিকাশ) এই নম্বরে যোগাযোগ করে যে কেউ সহযোগিতা করতে পারবেন।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আজিজ বলেন, বিষয়টি মানবিক। অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদন করলে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।