Sunday, August 10, 2025
Homeশীর্ষ সংবাদযেখানে উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে- সংসদে শেখ...

যেখানে উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে- সংসদে শেখ হাসিনা

চলমান বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলায় যেকোনো অবস্থার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।উন্নত দেশগুলো যেখানে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে। আমি তো বলেছি, আমাদের তৈরি থাকতে হবে। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা আছে, মানুষ যেন ভালো দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রোববার জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমদানি পণ্য বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, সার, বীজ ও তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও পালটা নিষেধাজ্ঞায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়ছে। পণ্য পাওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। তিনি এ সময় দেশের আমদানি রপ্তানি পরিস্থিতি, রিজার্ভ, বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিসহ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন সংসদে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা তো দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এক কোটি মানুষকে কার্ড দিয়েছি। তাদের ৩০ টাকা কেজিতে চাল দিয়ে যাচ্ছি। তেল, চিনি, ডাল কম মূল্যে সরবরাহ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছি। যে কারণে আমি আহ্বান করছি এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে, সুস্থ থাকে। যেখানে উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমাদের তো ভুগতেই হবে। আমি তো বলেছি, আমাদের তৈরি থাকতে হবে যেকোনো অবস্থার জন্য। দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, দামি গাড়ি না চালালে, আঙুর-আপেল না খেলে কী হয়? এখন তো আমাদের দেশীয় ফল প্রচুর আছে। সবাইকে বলব এই বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে, আমদানিকৃত জিনিসের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানি বাড়ানো, কোন দেশে কী পণ্য রপ্তানি করা যায় চেষ্টা করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করেছে। প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বেড়েছে। এতে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ বা যাদের জ্বালানি তেল, গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে হয়, তাদের সবাই সঙ্কটে পড়েছে। তারপরও সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রিজার্ভ নিয়ে সবাই আলোচনা করে। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন রিজার্ভ পাই ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ক্ষমতায় এসে কিছুটা বাড়িয়েছিলাম, প্রায় ৪ বিলিয়নের কাছাকাছি। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় এসে রিজার্ভ পাই ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন কিন্তু রিজার্ভ নিয়ে এত আলোচনা হয়নি। ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি রিজার্ভ ছিল ১৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ দফা ক্ষমতা গ্রহণের সময় রিজার্ভ তখন ৩২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৩০ জুন রিজার্ভ ছিল ৩৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২১ সালের ৩০ জুন ছিল ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের ৩০ জুন ছিল ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা প্রায় ৪৮ বিলিয়নের কাছাকাছি গিয়েছিলাম। করোনা কমে যাওয়ার পর সব কিছু উন্মুক্ত হওয়ায় আমাদের আমদানি বাড়তে থাকে। ফলে রিজার্ভ কমতে থাকল। গত ৩ নভেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার। আমাদের যে রিজার্ভ আছে সেটা নিয়ে অন্তত ৫ মাসের আমদানি করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে তিন মাসের আমদানি করার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।

ডলারের ওপর চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ওপর একটা চাপ আছে। অবশ্য ঋণপত্র খোলার জন্য যে বাড়তি চাপ তা ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে যাতে ডলারের চাপ কেটে যায় সেদিকে দৃষ্টি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, রিজার্ভ গেল কোথায়? শুধু বললে তো হবে না। আমরা বিনা পয়সায় করোনার ভ্যাকসিন দিয়েছি। এই ভ্যাকসিন কিন্তু ডলার দিয়ে কিনতে হয়েছে। সিরিঞ্জ কিনতে হয়েছে। করোনাকালে চিকিৎসাকর্মীদের আলাদা ভাতা দিয়েছি।

সরকার সার্বিক বিষয়ে সতর্ক রয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ (রোববার) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে বসেছি। সামনে কী হতে যাচ্ছে সেটা একটা আশঙ্কার ব্যাপার। ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয় সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের বিলাস দ্রব্যের আমদানি কমাতে হবে বা এর ওপর আমাদের ট্যাক্স বসাতে হবে বেশি করে।

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অর্থনীতিটা ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবাইকে বলব সবকিছুতে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুতের সুইচ বন্ধ রাখতে হবে। 

সরকারের ঋণ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক নয় জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, সরকারি ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। আমরা কোনো দিনই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইনি। আমরা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করে যাই। কখনো ডিফল্টার হইনি। ভবিষ্যতেও হব না।

বাজেটে সরকার ভর্তুকি ধরে রেখেছিল জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, পরিবহণ খরচ বাড়ায় ভর্তুকির চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। আজকে সেখানে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়েছে ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যদি আমরা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ দিতে চাই, তাহলে এই ভর্তুকি দিতে হবে। জ্বালানি তেলে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ১৯ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। খাদ্য আমদানিতে লাগছে ৪ হাজার কোটি টাকা। টিসিবিসহ জনবান্ধব কর্মসূচিতে অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা। ১ কোটি মানুষকে কার্ড দিয়েছি। স্বল্পমূল্যে তাদের খাদ্য দিচ্ছি। মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সেই জন্য দিচ্ছি। কৃষি খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি লাগছে ৪০ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ১০৫ কোটি টাকা শুধু ভর্তুকি চাহিদা বেড়েছে।

গ্যাসে প্রতি ঘনমিটারে ১০ টাকা ৬০ পয়সা করে ভোক্তা পর্যায়ে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিল্প কারখানার এলএনজির গ্যাসের প্রতি ঘনমিটারে ৪৮ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

সারের ভর্তুকির তথ্যও এ সময় তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, গত এক বছরে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যে দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বিশ্ববাজারে বেড়েছে। চাল, গম ও আটার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করে। আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহণ ব্যয় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্যদ্রব্য রিজার্ভ থাকার পরেও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমদানি করেছে সরকার। রাশিয়া বাধা সরিয়ে নেওয়ায় ইউক্রেন থেকে গম ও তেল আসা শুরু হয়েছে। দেশে আমন, আউশ ধান সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে। বোরো উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা বেশি হবে বলে মনে করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য