মোঃ রফিকুল ইসলাম
অনেকদিন হলো দেশে হরতাল নেই, রাস্তাঘাটে নেই কোন মারামারি, হানাহানি। মনে হচ্ছে আমরা যেন সবাই সহাবস্থানে বসবাস করছি। মনে হচ্ছে আমরা পশ্চিমা বিশ্বের কোন এক দেশে বসবাস করেছি। কয়েকটি বছর খুবই ভালো কেটেছিল। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালকবৃন্দেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে আমাদের প্রাণ প্রিয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
আপন মনে অফিস করছি। অফিস ছুটির পর সন্ধায় খবর পেলাম তেলের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ফলে পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘট আহবান করেছেন। পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। যথারীতি সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে ধ্যানদরবার চলছে। সবার মনে একই কথা কি করা যায়। আমরা সাধারণ মানুষ শুধু দিনের প্রহর গুনছি কখন কি ঘটে উপরের মহল থেকে কি নির্দেশনা আসে। হঠাৎ জানতে পারি ০.৪৫ পয়সা করে গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করা হচ্ছে| ইতিহাস থেকে জানা যায় রাষ্ট্র পরিচালকগণ দেশের তথা জাতির সেবক। সেবা করাই রাষ্ট্র পরিচালবৃন্দের কাজ। রাজনৈতিক মানে রাজার নীতি। কিন্তু আজ দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আমাদের দেশের শতকরা ৯৫% রাষ্ট্র পরিচালকগণ কোন না কোন ব্যবসার সাথে জড়িত। সবাই ব্যবসা করেন এবং ব্যবসার নিয়ম হলো ব্যবসাকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায়। একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ীর নিঃশ্বাসে, বিশ্বাসে এবং কল্পনায় কিভাবে একটা ব্যবসা থেকে আর একটা ব্যবসা বৃদ্ধি করা যায়। ফলে তারা সেবকের চাইতে ভক্ষকের স্থানে অধিষ্ঠিত হয়।
এমনিতেই মানুষের দীর্ঘশ্বাস। করোনাকালীন সময়ে আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়েছিল। মহান আল্লাহর অসীম রহমতে করোনার কড়াল থাবা থেকে ধীরে ধীরে করোনা মুক্ত হয়ে কিছুটা স্বস্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে দেশের জনগণও নিজের পায়ে নিজে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
এরইমধ্যে হঠাৎ গ্যাস ও তেলের দাম বৃদ্ধি মনে হচ্ছে “মরার উপর খারা ঘা”। অর্থাৎ মানুষটাকে এমনভাবে মারা হলো মারতে মারতে কুপোকাত। এরপরও বলা হলো লোকটি কেন নরে চরে। দেশের সাধারণ মানুষ এমনেই ব্যবসা, বাণিজ্যে চাকুরী-বাকরীতে পেছনে পড়ে আছে এর মধ্যে সরকারে এহেন পদক্ষেপ খুবই নীচু মনের এবং নীচু শাসন-শোষনের সমতুল্য। যেখানে দিন দিন বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটা সময় ঢাকার অনেক স্থানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভিক্ষুকমুক্ত জোন লিখা সাইনবোর্ড জুলানো ছিল। অপ্রিয় হলেও সত্য আজ চায়ের দোকানে বসবেন আপনার পাশে ৩/৪ জন ভিক্ষুক এসে হাজির। বাসা বাড়িতে এমনকি রাস্তার সিগনালে গাড়ীতে, বাজারে, দোকানে সকল যায়গায়ই বিরাজ করছেন গরীব/ভিক্ষুক মানুষ। সেখানে কি করে তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে কাদেরকে খুশী করা হচ্ছে আমাদের সাধারণ মানুষের বোধগম্য নহে। আজ সাধারণ মানুষের এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে অফিস করছেন ঠিকই কিন্তু দুপুরে ভাত খাবারের পরিবর্তে একটা সিংগারা বা একটা পুরি খেয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিয়েছেন। অর্থাৎ পেট ভুরে দুমুটো খাবার খেতে পারছেন না। সেখানে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, তেল, গ্যাস, নীত্য নৈমিত্তিক পণ্যের উর্দ্ধগতি/মূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ অর্ধহারে অনাহারে দিনাতিপাত করেছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। যারা দেশ পরিচালনায় তারা সাধারণ জনগণের অবিভাবক। তাদের উপর দেশ ও জাতির অনেক কিছু নির্ভর করে। তারা যদি মানুষের দুঃখ কষ্ট না বুঝেন তাহলে মানুষ যাবে কোথায়। রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায় তাহলে মানুষ কার কাছে আশ্রয় নিবে। কার কাছে জানাবে মনের আরজি। পরিবহন মালিকদের সাথে রফাদফা সিদ্ধান্ত হলো ০.৪৫ পয়সা করে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে। পেপার পত্রিকায় প্রকাশ করে দিলেন। সকাল থেকে গাড়ী চলাচলে মানুষের মধ্যে কথা কাটাকাটি পরিবহন শ্রমিক বলছেন মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল পূর্বের ভাড়া ২০ টাকা বর্তমান ৩০ টাকা তুলছেন। প্রশ্ন হলো মোহাম্মদপুর থেকে মর্তিঝিলের দুরত্ব কত কিলোমিটার বা প্রতি কিলোতে কতটাকা নির্ধারণ করা হব তাহা খোলসা করে বলা হয়নি। ফলে শিক্ষিত যাত্রীরা পরিবহন শ্রমিকদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে নিজের মান-সম্মানের হানি ঘটাচ্ছে।
আশা করি, যেহেতু ঢাকার অধিকাংশ এলাকা থেকেই মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় চাকুরী করেন, ব্যবসা করেন। ফলে ঢাকার প্রতি এলাকা থেকে মতিঝিলের দুরত্ব নির্ণয় করে ভাড়া নির্ধারণ করুন। অন্যথায় প্রতিদিনই মানুষের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের সাথে কোন না কোন ভাবে ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ড হবে এমন কি তাদের মারামারি, হাতাহতিও হতে পারে। দয়া করে প্রতি কিলোতে কত টাকা হতে পারে তা জানিয়ে দিলে শ্রমিক এবং যাত্রীরা সহাবস্থানে থাকতে পারবে।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, লালমোহন, ভোলা।
