শাহিন কামাল
একবার আমাদের বাড়ির বেশ খানিক দূরে এক বাড়িতে আগুন লেগেছিল। তখন আমি অনেক ছোট। আগুনের কুন্ডলী দেখে বড়দের সাথে গ্রামের সেই বিলের পথে সেই বাড়িতে গিয়েছিলাম।সে বাড়িতে অনেকগুলো ঘর ছিল। আগুন দেখে আশপাশের অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিল। যার যা সুযোগ ছিল পুকুর থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। একদল মানুষকে দেখেছি, যে ঘরে আগুন লেগেছিল তার পাশের ঘরের চালে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে। কাঁথা আর চটের বস্তা চালে দিয়েছে যাতে তাতে পানি ধরে রাখতে পারে। অর্থাৎ আগুন যেখানে লেগেছে সেটা নেভানোর সাথে সাথে যাতে পার্শ্ববর্তী ঘরে না ছড়ায় সে চেষ্টাও ছিল।
বছর দুয়েক আগে ভোলা শহরে আগুন লাগলেও একই চিত্র দেখেছি। যে ঘরগুলোতে আগুন লেগেছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেগুলোতে পানি দেয়ার সাথে সাথে আগুন যাতে না ছড়ায় তার জন্য পাশের ঘরগুলো ভিজিয়ে দিয়েছিল। এবং এভাবেই আগুনের বিস্তার থেকে বাকি ঘরগুলোকে রক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে দুইপ্রকার ঘরের মধ্যে কোন তুলনা, পারস্পরিক পুরোনো কোন অতীত টানতে দেখিনি।
করোনায় আক্রান্ত বিপর্যস্ত বিশ্বে অনেক দেশ ইতোমধ্যে নাস্তানাবুদ হয়েছে। ইউরোপের তামাম শক্তিশালী দেশগুলোর যে ভয়াবহতা আমার দেখেছি, তাতে মানুষমাত্রই ভেতর কেঁপে উঠার কথা। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের প্রতিবেশী ভারতের অবস্থা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে ভীতিকর খবর আসছে। ভারতের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার আর চিতার আগুনের লেলিহান শিখার খবরও মিডিয়া প্রকাশ করছে। আমাদের সরকার বিশেষজ্ঞদের কথা মতো সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। নতুন ত্রিমাত্রিক ক্ষমতাসম্পন্ন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হলেও আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। পন্য আদানপ্রদান আর জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগতো থাকছেই।
ভারতের এই নাস্তানাবুদ সময়ে আমাদের ভয়টা সবচেয়ে বেশি। এখানে অন্য কোনোভাবেই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। ভারতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই সাধারণ মানুষ যারা হয়তো কোন সাম্প্রদায়িক মনোভাব লালন করেনি। এ মূহুর্তে যদি ইসরায়েলের দিকে তাকাই, সেখানেতো মৃত্যুহার শুন্যতে চলে এসেছে।
যাদের প্রতি আমাদের এত ক্ষোভ তাদের জন্য আমরা কখনও কি হেদায়েতের দোয়া করেছে? ধ্বংসের দোয়ার পরিবর্তে হেদায়েতের দোয়া করাই তো জরুরি ছিল। যে ব্যাক্তিরা মসজিদে, মানুষের উপর হামলা করেছিল বলে অনেকের ক্ষোভ, হতে পারতো তারা মসজিদ রক্ষায় জীবন দিতেন।
যারা কথায় কথায় আল্লাহর কাহহার নামটি সামনে আনছেন তাদের মনে রাখা জরুরি আল্লাহ রহমান হিসেবেই বেশি পরিচিত। আল্লাহ ধরা বড় শক্ত ধরা সত্যি কিন্তু কোনটা তার ধরা আর কোনটা সামগ্রিক বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ সেটা তো মানুষের জানার কথা নয়। অন্যের বিপদে আত্মতুষ্টির শিক্ষা ইসলাম সমর্থন করে না। এখন থেকে নিজেদের শোধরানোর শিক্ষাও হতে পারে।
জীবন ও জীবিকার টানাটানিতে দোকানপাট খুলে দেয়া হয়েছে। গনপরিবহনও চলবে। এছাড়া উপায়ও নেই। যাদের নিয়মিত অর্থের ব্যবস্থা আছে সে হারের লোকজন দেশে কম। জীবীকার জন্য মানুষকে বের হতেই হবে কিন্তু যাদের ঘরে থাকলে চলে তারা কেন এবার শপিং এ যাবে? এভাবে ভীড়ের মধ্যে কেনাকাটা কী খুব জরুরি। তবে যারা এ ভাবনায় দোকানগুলোতে ভীড় করছেন যে পছন্দসই কাপড় পরে পাবেন না তারা একটা কাজ করতে পারেন। বাহারি কেনাকাটার সাথে স্বল্পদামে সাদা কাপড়ও কিনে রাখতে পারেন। না, আমি কাফনের কাপড়ের কথা বলছি না। আমাকে ভুল বুঝবেন না। সাদা কাপড় আমার অনেক পছন্দ, তাই বললাম। এই যে এক যুগ ধরে প্রায় সাদাই পড়ে যাচ্ছি পছন্দ করি বলে।


















