শাহীন কামাল
ডাক্তার, পুলিশ আর ম্যাজিস্ট্রেটের পরস্পরের আলাপচারিতার ভিডিও আজ ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের প্রায় সবাই যত্ন করে দেখেছেন। অবশ্য করোনাকালীন সময়ে সিয়াম সাধনায় আমরা দিনশেষে কিঞ্চিৎ মনসংযোগ ঘোরানোর কিছুটা সুযোগ পেয়েছি। একঘেয়েমি মন সামান্য হলেও ঘুরে এসেছে। এটা অবশ্য সকলের জন্য ভালোই বলতে হয়।
পুলিশ ডাক্তার সাহেবের কাছে আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছেন। এটা পুলিশের কাজের অংশ ছিল। স্পষ্ট করতে বলতে গেলে তিনি আসলে এই ডিউটির জন্যই রাস্তায় দাড়িয়েছেন অথবা তার কর্তৃপক্ষ তাকে এইজন্যই রেখেছেন। ডাক্তার সাহেব দেখাতে পারেননি। ভিডিও দেখে মনে হয়েছে উনি দেখান না, দেখাতে অভ্যস্ত না। ভাবটা অনেকটা এমন যে কেন তার কাছে আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছেন। তিনি নিজেই তার আইডি।
পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ থাকলেও ভিডিওতে তাদের সেরকম অপরাধী মনে হয়নি আজ। ভদ্রমহিলা তার আইডি কার্ড দেখাতে মিস করতেই পারেন। তিনি কিন্তু পুলিশকে কনভিন্স করতে চেষ্টাই করেননি। ডাক্তার সাহেব ডিউটি থেকে ফিরছিলেন। পুলিশ তো হাওয়া খাচ্ছিলেন না। রাস্তায় দাড়িয়ে আমাদেরকে ম্যানেজ করা সহজ কাজ নয় যেখানে আমরা শিং মাছ কিনতে মুভমেন্ট পাস দিয়ে ১৫/২০ কিলোমিটার দূরে যাই। রাস্তায় লকডডাউন ঠিক মতো হচ্ছে কিনা সেটা দেখতেও আমার ভীড় করি রাস্তায়। ভারী পোশাক আর অন্যান্য দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান শক্তির কারণে তারাতো এমনিতেই গরম। কালকের কথা মনে নেই আমাদের? শুধুমাত্র শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে ৪ জনকে ফেলে দিয়েছে। হাতে এমন ভারী বৈধ অস্র থাকলে শক্তিতো একটু বেশিই থাকে। অন্তত এরশাদ প্রিয়ড পর্যন্ত পুলিশ পায়ে গুলি করতো। ইদানীং রাইফেলের অগ্রভাগ বাঁকা হয়ে উপরে উঠেছে নাকি বিক্ষোভকারীদের বুক হাঁটুতে নেমে গেছে বুঝিনা! গুলি করলেই বুকে লাগে।
ডাক্তার সাহেব কেন আইডি কার্ড দেখাননি তা তার আচরণ, পরিচয় আর যোগাযোগ দেখেই স্পষ্ট। নিজের এতএত যোগ্যতা, পারিবারিক ঐতিহ্য আর উপর মহলে যোগাযোগ থাকলে তিনি কেন আইডি কার্ড দেখাবেন? আমাদের অবশ্য ডাক্তার সাহেবকে অন্য কারনে স্যালুট করা উচিৎ, তিনি এত প্রভাবশালী হয়েও করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাসায় বসে থাকলে কার সাধ্য ছিল তাকে অফিসে নেবে?
ডাক্তার না হতে পেরে পুলিশ হয়েছে! একজন দায়িত্বশীল লোকের মুখে এধরণের কথা বেশ বেমানান ছিল। অশালীন কথা হয়েছে অনেক। আমাদের এই করোনা পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের ত্যাগ তিতিক্ষা সর্বজন জ্ঞাত। সেবা নিতে গিয়ে অনেকে জীবন দিয়েছেন। অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন করতেও পারি, ডাক্তারদের আসলে কাজটা কি? চিকিৎসা দেয়া যদি তার পেশা হয়, তবে তিনি তাইই করছেন। তবে, স্বাভাবিক সময়ে কোন কোন ডাক্তারদের যেই সেবা পেয়েছি তা ভুলব কিভাবে? অফিস টাইমে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে ভিজিট দিয়েও রোগী দেখার ঘটনা ঘটে। ক্লিনিকে প্রেসক্রিপশনে দু একজন পরিচিত ডাক্তার ভালোবেসে লিখে দিয়েছেন ২০% অফ। আমি অবশ্য তখন ভেবেছি যারা এতদিন এই কথাটি লেখেননি তারা ভিজিটের সাথে ডায়াগনোসিসের নামে কত ২০% নিয়ে গেছেন। হ্যাঁ, অনেক ডাক্তার সাহেব এইটা গ্রহণ করেন না। তবে প্রায় সকল রোগীকেই অতিরিক্ত ২০% দিতে হয়। মানবিক ডাক্তার পেয়েছি অনেক। প্রয়োজন সময় ডাক্তার না পেয়ে ছটফট করার ঘটনাও আছে অনেকের।
পেশাগত জায়গায় কেউ কারো থেকে কম নয়। যে যেভাবে পারছেন, তুলে নিচ্ছেন। বলবেন, মাস্টাররা? হ্যাঁ, শুধুমাত্র এই বেত ছিল হাতে তাতেই কত কী? যদি লাইসেন্স করা ভারী অস্র থাকতো?
আমার এক পরিচিত একটা গল্প বলেন প্রায়ই
- এক লোক সব সময় বলে বেড়ান, আমি ঘুষ খাই না। তো অন্যজন জিজ্ঞেস করে, আপনি কি করেন?
বলে, আমি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।
ডাক্তার সাহেবের আচরণ দেখে একটা গল্প মনে এসেছে। সত্যিকারের গল্প। অনেকে শুনে থাকতে পারেন। গাইনি প্যাসেন্ট ব্যাথায় চিকিৎসা করার সময় ডাক্তার ধমক দিয়ে বলেছেন, …… তখন মনে ছিল না।
ডাক্তার পুলিশের এই নাটক দেখে কেউ একজন আমাকে বলেছেন, আপনি আসলে কোন পক্ষে?
এ প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি-
-কোন এক জায়গায় সুরা ফাতেহা নিয়ে সাধারণ মুসল্লীদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে। একদল ‘দোয়াল্লিন’ তো অন্যপক্ষ ‘জোয়াল্লিন’। একলোককে জিজ্ঞেস করা হলো তুমি ‘দোয়াল্লিন’ না ‘জোয়াল্লিন’? লোকটা উপায়ন্তর না পেয়ে বলে উঠল –
মুই নমজই পড়ি না!
বিষয়টা আসলে কিছু না। শুধুই ক্ষমতার দম্ভ। মুই কী হনুরে অবস্থা। যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেই, পুলিশ অপরাধী তবে একজন প্রভাবশালী ডাক্তারের সাথে যদি এই হয় তবে আমাদের মতো ম্যাংগো পিপলের অবস্থা একটু ভাবুন। আর যদি একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ অফিসারের সাথে একজন ডাক্তারের এই হয় আচরণ তবে রোগীরা যে এখনও চিকিৎসা পাচ্ছেন, এতো বিশাল বিষয়।
দিনশেষে হাতটাই আসল- কার হাত কত লম্বা, বাকি সব বইয়ের ভাষা- কবিতার লাইন।
সংগৃহীত