মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্যে। এই প্রবাদ বাক্যটি আজকাল বিলুপ্ত হওয়ার পথে। মানুষ কোন কিছুতে ক্ষতিগ্রস্থ বা বিপদে পরলে বিপদগ্রস্থ মানুষটি একটু সহাভূতি পেতে অন্যের দ্বারস্থ হয়। সাহয্যের জন্য। কিন্তু সেই সাহায্য সহানুভূতির স্থানটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। মানুষ আজ কারো দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ব্লাকমেইল করে।
মানুষ মানুষের ক্ষতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করে। কিন্ত কেন? আজ মানুষের সেই ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সাহায্যের হাতখানা বিনষ্ট হলো। এর পেছনে কি রহস্য তা উদঘাটন করা জরুরী। অন্যথায় মানুষে মানুষে ঝগড়া বিপদ ঘটিয়ে নিজেরাই নষ্ট হবে। এভাবে চলতে চলতে একদিন মানব সম্প্রদায় শেষ হয়ে যাবে।
এর পেছনের রহস্য জানা দরকার। আসুন আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে জেনে নেই। মানুষ জীবিকার জন্য কাজ করে। কাজের পারিশ্রম হিসেবে যা পায় তা নিয়েই পরিবার পরিজনের চাহিদা মিঠিয়ে থাকে। অপ্রিয় হলেও সত্য মানুষ মানুষকে পণ্য হিসেবে বেচা কেনা করছে। আজ চারিদিকে মানুষের হা-হা-কার।
মানুষ আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না। যা আছে তা নিয়ে সন্তষ্টি থাকে না। মানুষ আরও আরও কিছু পাওয়ার আশা করে। এই অতিরিক্ত আশার আখ্কার জালে আবদ্ধ হতেই একজন অন্যজনের ক্ষতি করতে দ্বিধাবোধ করে না। ক্ষতিগ্রস্থদের সাহয্যের জন্য এগিয়ে আসছে না। একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হচ্ছে না। কোন দুর্ববল পেলে তাকে আরো দুর্ববল করার চেষ্ঠা করছে। মানুষ চায় একাই সম্পদের পাহাড় জমাতে। অথচ মৃত্যু হলে দু’টুকরা কাপড় ছাড়া কিছুই যাবে না।
আঠারো হাজার মাকলুকাতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বুদ্ধি, জ্ঞান, আমল কামোল দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহর এবাদত করা, আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য। অথচ মানুষ সম্পদের পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করে মহান আল্লাহর এবাদত করা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে মানুষের সৃষ্ট অপকর্মে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা মানুষ। শ্রেষ্ঠ জীব। আমরা দানব নই। আমাদের অন্তর থেকে দনবের রুপ দানবের কাজ কর্ম দূরে সরিয়ে দিতে হবে। অন্তরে আল্লাহর হুকুম আহকাম ডুকাতে হবে। নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে। তবেই আমরা মানুষ হতে পারবো।
প্রকৃত মানুষের লজ্জা সরম আছে, শয়তানের লজ্জা সরম বলতে কিছু নেই। দানব কখনো মানুষ হতে পারে না। কারণ তার লজ্জা কি তা সে বুঝে না। তাই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। আমরা মানুষ কি তা করতে পারি? দুঃখের বিষয় আজ আমরা মানুষ তাই করে যাচ্ছি।
কাল কিয়ামতের দিনে সকল কিছুর বিচার হবে। ঐ বিচারে মানুষ ব্যতিত সকল কিছু শেষ হয়ে যাবে শুধু মানুষ থাকবে। মানুষের ভালো কাজের জন্য জান্নাত আর খারাপ কাজের জন্য নরক/দোজখ। যেখানে অনন্তকাল থাকবে।
আসুন আমরা সেই মহান আল্লাহর দেয়া বিধান, আল্লাহর দেয়া আল-কোরআন মেনে নিজেকে সুধরে জীবন গড়ি। আল্লাহ মানুষের প্রতি স্নেহশীল ও দয়াময়। তাঁর অনুগ্রহ এবং রহমত নিয়েই বেঁচে আছি। তাঁর স্নেহ বা মায়া মোনুষের বোঝানোর ক্ষমতা নেই বলেই মানুষ দিন দিন পথ হারা হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর স্নেহ ও মায়া-মমতার উপলব্ধি করে তাঁর অনুগ্রহের শুকরিয়া আদায় করার তাহওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, একান্ত সচিব, সিইও এন্ড চেয়ারপারসন, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ।