Thursday, June 26, 2025
Homeমন্তব্যমানুষ মানুষের মধ্যে বৈষম্য কেন?

মানুষ মানুষের মধ্যে বৈষম্য কেন?

মোঃ রফিকুল ইসলাম

আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক। দীর্ঘ পথ চলার পর আজ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই দেশের মাটিতে বহু জাতের মানুষের আগমন ঘটেছে। আর্য-অনার্যদের আগমনেই বাঙ্গালী জাতি। এই দেশের মাটি যেমন উর্বর তেমনি মানুষের মন মানষিকতায় কিছুটা ছাপ রয়েছে। এই দেশের মানুষগুলো অতিথি পরায়ন। অতিথি সেবায়, আপ্যায়নে খুব পারদর্শি।

জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিটশের উক্তিঃ মানুষ ভুল করে কোন কিছু করে এবং ভুল যিনি করেছি পতে তাও ভুলে যায়। আমাদের এই মাতৃভূমিতে অনেক ধরনের আন্দোলন হয়েছে! পরাধীনতার যুগে এবং স্বাধীনতার পরে। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম। ইংরেজদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মহান মুক্তিযুদ্ধ। আবার স্বাধীন দেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। ক্ষমতার লড়াই কত নিরস্ত্র মানুষ মারা গিয়েছে, বিনিময়ে তাদের পরিবার কী পেয়েছেন?

আমরা বাঙ্গালী জাতি মায়ের মুখের ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছি যা বিশ্বের কোথাও দেখা যায়নি। একমাত্র আমরা বাঙ্গালী জাতিই ১৯৫২ সালে উর্দু ভাষার বিরেুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। সালাম, বরকত, রফিক আসাদ আরও অসংখ্য মানুষের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।

তারই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আঠারো কোটি মানুষের প্রাণ প্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে জাতিসংঘের মাধ্যমে স্বীকৃতি লাভ করেছি। আমরা এখন আগাইতেছি কিভাবে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারি। সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে।

আমরা কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম? এর নানা কারণ রয়েছে তন্মধ্যে প্রধানত বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানবতার বিষ্ফোরণ। আমরা সাধারণত বৈষম্য বলতে টাকা পয়সার হিসাব বুঝি কিন্ত আসলে তা নয়, চাকুরি, সততা, ইনসাফও একটা বড় বৈষম্য। একজন সাধারণ মানুষ বেঁচে থাকার কয়েকটি নাগরিক অধিকার রয়েছে, তারমধ্যে (১) অন্ন (২) বস্ত্র (৩) বাসস্থান (৪) শিক্ষা ও(৫)চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক অধিকার বলে। একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য কিছু অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া থাকে। সংবিধানে উল্লিখিত অধিকারগুলিই একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার বা জীবনধারণের মৌলিক উপকরণ।

আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং আইনের আশ্রয়লাভঃ আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক নাগরিক সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী। একজন নাগরিকের আইনের অধিকার, আশ্রয়লাভের অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

স্বাধীন দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বাসস্থান বা পেশাগত কারণে কোন নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। এমন কি প্রজাতন্ত্রের যে কোন কর্মে নিয়োগ এবং পদবীর ক্ষেত্রেও বৈষম্য থাকা যাবে না। এমন কি আইন অনুযায়ী কাউকে জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত করা যাবে না। যদি কোন কারণে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় সেক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে রিট আবেদন করার অধিকার রয়েছে।

মানবাধিকার বলতে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য সকল সুযোগ-সুবিধা যেগুলো জন্মসূত্রে পাওয়া তা অর্জন করা। আর অধিকার বলতে রাষ্ট্রীয় আইন কর্তৃক স্বীকৃতি এং সংরক্ষিত সুযোগ-সুবিধা সবার জন্য সমান হতে হবে। কোন রাষ্ট্রের উচিৎ কেউ যেন বৈষমে শিকার না হয়। এছাড়া ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংগে মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়। এ জন্যই ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।।

পরিশেষে দেশে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চেতকরণে কোন ব্যক্তির জীবন, অধিকার, সমতা ও মর্যাদা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকা দলিলে ঘোষিত মানিবাধিকার। তা পরিপালনে এবং সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এবং দল বল নির্বিশেষে কারো প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।

লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, একান্ত সচিব, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও চেয়ারপারসন, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য