Friday, May 9, 2025
Homeদেশগ্রামমওলানা ভাসানীর কণিষ্ঠ পুত্র আবুবকর খান ভাসানীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

মওলানা ভাসানীর কণিষ্ঠ পুত্র আবুবকর খান ভাসানীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত


টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কণিষ্ঠ পুত্র আবুবকর খান ভাসানীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।এ উপলক্ষে সোমবার সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে টাঙ্গাইলের সন্তোষে আবুবকর খান ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপরমজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মাজারেদোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

এসময় ন্যাপ-ভাসানী ও খোদা-ই-খেদমতগারের সভাপতি হাসরত খান ভাসানী, ভাসানী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সচিব আজাদ খান ভাসানীসহ ভক্ত-মুরিদানগণউপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেলে ঐতিহাসিক দরবার হলে ওরশ মোবারক ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, আবুবকর খান ভাসানী ১৯৪৭ সালের ২৪ এপ্রিল (মেট্রিকুলেশন সনদ অনুযায়ী) আসামের ধুবরী জেলার দক্ষিণ শালমারা থানার আমতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ও হামিদা খানম ভাসানীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে তিনি রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকেই তিনি বি.এ. পাশ করেন। কলেজ জীবন থেকেই রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্র ইউনিয়নের হাত ধরে। পরে ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ) এর উত্তরাঞ্চলের কর্ণধার হয়ে ওঠেন তিনি। পাশাপাশি বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে তাঁর নেতৃত্বে গড়ে তোলেন শক্তিশালী কৃষক সংগঠন। ১৯৬৫ সালের ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ভুরুঙ্গামারীর ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলনের সক্রীয় কর্মী ও সংগঠক ছিলেন তিনি। এই সময়ে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে গড়ে তোলেন মাতা হামিদা খানম ভাসানীর নামে জুনিয়র স্কুল। এখানেই তিনি শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ‘৬৮-র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ‘৬৯-র গণঅভ্যুত্থান এবং ‘৭১-র স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ভাসানীর রাজনৈতিক আদর্শ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। স্বপ্ন দেখতে থাকেন কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে সাধারণ কৃষক-মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার। হয়ে ওঠেন পুরদস্তুর একজন রাজনীতিবিদ। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর পিতা মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী সুফী জীবনযাপনের দিকে ঝুঁকে পরেন। ক্রমে তাঁর লক্ষ লক্ষ ভক্ত, মুরীদান, অনুসারীর একান্ত অবিভাবক হয়ে ওঠেন তিনি। হয়ে ওঠেন আধ্যাত্মিক জগতের বাসিন্দা। বেছে নেন লুঙ্গি, পাঞ্জাবি আর বেতের টুপির অনাড়ম্বর জীবনযাপন। বাকি জীবন তিনি এভাবেই কাটিয়েছেন। টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে “চোরমারা আন্দোলন” করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তিনি। পরবর্তীতে এই চরাঞ্চলেই তিনি গড়ে তোলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী মাদ্রাসা, দরবার শরীফ, মসজিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৯ সালে তিনি টাঙ্গাইল জেলা ঠিকাদার মজদুর সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে টাঙ্গাইলে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ কৃষক মুক্তি আন্দোলন। ১৯৯৪ সালে ফারাক্কা ও আগ্রাসন প্রতিরোধ কাউন্সিলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০২ সালে পিতা মওলানা ভাসানীর পক্ষে মরনোত্তর ২১শে পদক গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি খোদা-ই-খেদমতগার পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে রবুবিয়্যাত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দেন। এরপরই তিনি অসুস্থ্য হয়ে পরেন। এভাবেই তিনি জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কৃষক শ্রমিক সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের কর্মী হিসেবে নিজেকে সক্রিয় রেখেছিলেন। ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর সন্তোষে পিতার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য