Thursday, July 31, 2025
Homeদেশগ্রামভোলা হাসপাতালে ডাক্তার লাঞ্চিত এবং……..

ভোলা হাসপাতালে ডাক্তার লাঞ্চিত এবং……..

শাহীন কামালঃ

ভোলা হাসপাতালে রোগীর স্বজন কর্তৃক ডা: লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু ডাক্তার কেন – যেকোনো পেশার জন্য এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। সাম্প্রতিককালে মানুষজন কেমন যেন অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। মব জাস্টিন রীতিমতো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদের সামনে মানুষ নাজেহাল হওয়ার দৃশ্য খুবই পরিচিত আমাদের কাছে। আদালত পাড়ায় মানুষ মানুষকে লাঞ্চিত করছে, চুরির অভিযোগে মানুষ মানুষকে মেরে ফেলেছে, চোখ উপড়ে ফেলছে! কেমন যেন বিচার হাতে তুলে নেয়ার প্রবৃত্তি। যেন সবাই এক একজন বিচার। নিজের আদালতে নিজে রায় দিয়ে সাথে সাথে কার্যকর করার চেষ্টা।

ডাক্তার নাঈমকে লাঞ্চিত করার দৃশ্য ফেইসবুকে দেখেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল আচরণে ভদ্রলোক রক্ষা পেয়েছেন। না হয় হয়তো আরও ভয়াবহ পরিনতি হতে পারতো। তারা ডাক্তার সাহেবকে রক্ষা করে নিরাপত্তা দিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু এই যে মানুষ পুলিশের সামনেও হামলা করার সাহস দেখিয়েছে তা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।

আমি সবসময় বলি, আদালত আর হাসপাতাল খুবই স্পর্শকাতর জায়গা। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় একজন মানুষ মুহুর্তের শেষ হয়ে যেতে পারে। আদালতে যথাযথ তদবির না হলে একজন মানুষের জীবনে ভয়াবহ পরিনতি হতে পারে। মামলা ও বিচারকার্য নিয়ে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা আছে। আমার কেন যেন মনে হয়, ঐ এলাকার দালানের প্রতিটি ইট টাকা পেতে চায়। টাকা চাওয়ার এই যে নানা ফন্দি, তার কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। সে বিষয়ের আলোচনা না হয় আরেকদিনের জন্যে তুলে রাখলাম।

ডাক্তাদের পেশার সাথে মানুষের জীবনমরণ জড়িত। ওই মহৎ পেশার সাথে জড়িত কেউ কেউ কিংবা অনেকে কোম্পানির টাকা নিয়ে ঔষধ লিখে দেয় আমাদের জন্য, টেস্ট করাতে তারা নিজের প্যাথলজিতে পাঠাচ্ছে এবং সেখান থেকে শতকরা হারে টাকা গুনে নিচ্ছে। হ্যাঁ, সরকারি হাসপাতালে বসেই ডাক্তারদের কেউ বিকেলে চেম্বারে সেই রোগীকে আসতে বলছে। হাসপাতালে রোগী না দেখে একই সময়ে চেম্বারে রোগী টানার জন্য হাসপাতালে দালাল রেখে দিয়েছে। বহুবছর আগে সরকারি হাসপাতালে বসে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখতে দেখেছি।

ডাক্তার নির্যাতনের পরে স্বভাবতই ডাক্তার কমিউনিটি ফুসে উঠেছে। দোষীদের বিচার দাবী করছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দাবী করছে। খুবই যৌক্তিক এই দাবীগুলোর সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।

কিন্তু এই যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীরা যথাযথ সেবা পাচ্ছেনা, অবকাঠামোগত অসুবিধা এবং যন্ত্রপাতির স্বল্পতা দিয়ে ডাক্তারের কেউ কোনদিন সোচ্চার হয়েছেন? হয়নি। কারণ এখানে সেবার মান খারাপের সাথে ডাক্তারদের অর্থনৈতিক সুবিধা জড়িত। ফলে নামেমাত্র সরকারি হাসপাতাল টিকে থাকলেই যথেষ্ট।

ভোলা হাসপাতালের এই ঘটনার সাথে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেই, দোষী সাব্যস্ত করা সহজ হবে। রোগীর স্বজনদের মতে মুমূর্ষু রোগীকে ফেলে ডাক্তার বের হয়ে গেছে। এটা যদি সত্যি হয়, তবে কিভাবে আপনি ডিফেন্ড করবেন? অভিযোগ মতে, ডাক্তারকে একরকম জোর করে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। এটা কে না জানে, একটা রোগীর অবস্থা কতটা ভয়াবহ হলে মানুষ ভোলা হাসপাতালের মতো যেনতেন চিকিৎসা নিতে যায়। কোন বিকল্প না থাকায় একজন রোগীকে হাসপাতালে নিতে অনেক সময় ব্যয় হয়, তখন যদি ইমারজেন্সী চিকিৎসা না মিলে তবে তো মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতেই পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ অভিযোগ, ডাক্তার রোগীকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে বের হয়ে গেছেন, পরে তাকে খুঁজে আনার পরে লিখে দিয়েছেন ‘ গট ডেড’।

সেবার বিষয়ে পুরো জাতি ডাক্তারদের কাছে যে পরিমাণ নির্ভরশীল অন্য কোন পেশায় সেটা নয়। এটা জীবনমৃত্যুর খেলা। এখানে কম্প্রোমাইজ করার সুযোগ নেই। দেরী করার সুযোগ থাকেনা, একবার ভুল হলে শুধরানোর পথ চিরতরে বন্ধ থাকে। প্রতিবছর ইন্ডিয়ায় চিকিৎসা নিতে যে পরিমাণ লোক যায় কিংবা যেতে হয়, তা অন্য কোন ক্ষেত্রেই নয়। তাই এ পেশার সাথে অন্য পেশা মিলানোর সুযোগ নেই।

ডাক্তার পেশাটা এতই গুরুত্বপূর্ণ, লোভনীয়, প্রয়োজনীয় আর সম্মানজনক যে, এ দেশের সকল বাবা মা পারলে কমপক্ষে একজন সন্তানকে ডাক্তার বানায়। এদেশে অত্যন্ত মেধাবী ছেলেমেয়েরা ডাক্তার হয়। একজন শিক্ষার্থীকে ডাক্তার হওয়ার জন্য যে পথ পাড়ি দিতে হয়, তা সহজ নয়- বরং এক বন্ধুর পথ মাড়িয়ে তাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়।

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি করে শুন্যপদে নিয়োগ দেয়ার দাবী করছি। ভোলা হাস্পাতালের আইসিউ, সিসিইউর এর ব্যবস্থা করা সময়ের দাবী। ভোলা থেকে যেনো রোগীকে বরিশাল / ঢাকায় রেফার করতে না হয়। কোন পেশার মানুষ যেন লাঞ্চিত না হয়, মব জাস্টিস বন্ধ হোক চিরতরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য