Thursday, June 26, 2025
Homeবাণিজ্যবীমা শিল্পকে রক্ষা করতে হলে এখনই বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে

বীমা শিল্পকে রক্ষা করতে হলে এখনই বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে

মোঃ রফিকুল ইসলাম

প্রবাদ বাক্য শুনেছি হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না কিন্তু আজ আমরা কি দেখছি এটাই কি বাস্তবতা না কি আমরা কারো কাছে নতি স্বীকার করেছি না আমরা মানব জাতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছি। আজ আমরা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছি। আমরা নীতি নৈতিকতা ভুলে গিয়েছি। ধীরে ধীরে আমাদের থেকে মানবতা কমে যাচ্ছে। আমাদের কথায় আর কাজে মিল খুঁজে পাচ্ছি না। এক কথায় সব কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা অবলা প্রানীর মত হয়ে যাচ্ছি। বড়দেরকে সম্মান দিতে জানি না এবং ছোটদেরকে স্নেহ করতে ভুলে যাচ্ছি।

বীমা শিল্প ধ্বংসের ধারপ্রান্তে। কারণ বীমা কর্মীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে থাকেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। বীমা কর্মীদের মাসিক একটা টার্গেট থাকে এবং টার্গেট পূরণ না হলে বীমা কর্মীদের বেতন-ভাতা দেয়া হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে বীমা কর্মীরা ব্যাংকের ঐ সকল অসুদুপায়ী ব্যক্তিবর্গের কাছে হার মেনে বীমা ব্যবসা আহরণ করে থাকেন। আর পাঁচটা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মত বীমা কর্মীদের ঘর সংসার, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। তাঁরাও তাদের মত বাঁচতে চায়। তাদের মত ঘর সংসার করতে চায়। সমাজে আর পাঁচজন চাকুরীজীবিদের মত মাথা উচু করে চলতে চায়, মাথা উচু করে বাঁচতে চায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় কিছু সংখ্যক ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনৈতিক যোগসাজসে বীমা গ্রহীতাদের অনৈতিক চাওয়া পাওয়ার কাছে সেটা হয়ে উঠে না। কারণ গরুর বাজারে যেমন বিক্রেতা ক্রেতাকে বলেন থাকেন ভাই আমার গরু একটু আগে এক লাখ বিশ হাজার টাকা বলে গিয়েছেন আমি এক দাম এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা পেলে বিক্রী করবো। তদ্রুপ বীমা গ্রহীতাগণ বীমা কর্মীদেরকে বলে থাকে অমুক কোম্পানীর থেকে চল্লিশ পার্সেন্ট কমিশন দিতে চাচ্ছেন। আপনি কত পার্সেন্ট কমিশন দেবেন? তখন বীমা কর্মী ব্যবসা পাওয়ার জন্য দুই পার্সেন্ট বৃদ্ধি করেন। এইভাবে বীমা শিল্প দিন দিন রুগ্ন হতে চলেছে। আগে জেনেছিলাম সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঘুষ খায় এবং বিধর্মীরা সুদ ও ঘুষ খায়। এখন দেখা যাচ্ছে বেসরকারী কর্মকর্তাগণও ঘুষ নিয়ে থাকেন এবং মুসলমানগণও সুদ নিয়ে থাকেন। এক সময় এটাও বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু আজকাল বাস্তবে তাই ঘটেছে। মানুষের নৈতিকতা বলতে কিছুই নেই। মানুষের অধঃপতন দেখে মনে হচ্ছে এরা চিরদিন বেঁচে থাকবেন। কোন দিনই মৃত্যু হবে না। তা-না হলে কেন এমন ভাবে একজন অন্যজনকে ধোকাবাজি দিয়ে অনৈতিকভাবে টাকা উপার্জনে মেতে উঠেন। যেটা ছিনতাইর থেকে কঠিন। ছিনতাইকারীরা পরিশ্রম করে জানের ভয়কে হারাম করে রিক্স নিয়ে ছিনতাই করে টাকা উপার্জন করেন। অথচ একজন ব্যাংকার ঠান্ডা মাথায় মানুষের আহার হরণ করে যাচ্ছেন।ধরুন মাঠে একটা মরা গরু ফেলে রাখা হয়েছে। এখন যে গ্রামের বা যে বাড়ীর কাছে রাখা হয়েছে সেই গ্রামের/বাড়ীর কুকুরগুলো আগেই দখল নিয়েছে এবং দূরের কুকুর আসলে সব কুকুর একত্র হয়ে হামলা করে এবং মরা গরুটি টেনে ছিড়ে খেয়ে থাকে। ঠিক একইভাবে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ বীমা কর্মীদের দুর্বলতার সুযোগ পেয়ে দিন দিন গরু বিক্রেতার মত মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অবৈধভাবে বীমা কর্মীদেরকে ট্যাপে ফেলে বলেন আরে ভাই আপনি আসছেন একটু আগে অমুক কোম্পানীর লোক এসে চল্লিশ পার্সেন্ট কমিশন দিতে চেয়েছিল কিন্তু আপনি আমার অনেক দিনের ভাই আপনাকে না বলে কিভাবে ব্যবসাটি দেই। বাধ্য হয়ে বীমা কর্মীর উপর যেহেতু মাসিক টার্গেট আছে সেহেতু আর কোন উপায় বা রাস্তা না পেয়ে বাধ্য হয়ে কমিশনের হার(%) বৃদ্ধিতে রাজী হয়ে ব্যবসাটি আহরণ করেন। মাসের শেষে বীমা কর্মী খালি হাতে বাড়ী ফিরেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটা উপায় আছে সেটা হলো সকল বীমা কোম্পানীর ব্যাংক হিসাব নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে এবং বীমা কর্মীদের বেতন-ভাতাদি তাঁদের স্ব-স্ব ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। তবেই যদি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। অন্যথায় এখানে আল্লাহ মাফ করুন স্বয়ং ফেরেস্তা দিলেও ব্যাংকার এবং বীমা গ্রহীতাগণ কমিশন বানিজ্য করবেই। আজকে আমরা ডিজিটাল বলছি এবং নিজেদেরকে ডিজিটালাইস্ড দাবী করছি। হাতের নাগালে সব কিছু পাচ্ছি। হাতের মুঠোয় পুরো বিশ্ব। দিনে দিনে আমাদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুঃখের বিষয় কি শিক্ষা গ্রহণ করছি, কি শিক্ষা অর্জন করছি। সুশিক্ষা না কুশিক্ষা। একজন পিতা মাতার ঘাম ফেলে সন্তানের জন্য কাজ করেন। সেই পিতাই শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আমরা যত বেশী শিক্ষিত হচ্ছি আমরা ততবেশী খারাপ হচ্ছি আমাদের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে। এর থেকে বাঁচতে হলে এই সমাজকে বাঁচাতে হলে সবার মধ্যে নৈতিকতা আনতে হবে। তবেই আমরা সকলে মানুষ হিসেবে বাঁচবো এবং সমাজকে বাঁচাবো। অন্যথায় আমরা সেই অন্ধকার চলে যাবো।

লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ে একান্ত সচিব, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য