ফের বিষাক্ত ধোঁয়া ও কুয়াশায় ঢেকে গেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির আকাশ। ফসলের মাঠে খড় পোড়ানো তো আছেই। তার সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আতশবাজি ফোটানো।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এবার দিওয়ালিতে দিনরাত পোড়ানো হয়েছে লাখ লাখ বাজি। ফলে ফের ‘গ্যাস চেম্বার’ হওয়ার পথে দিল্লি।
এনডিটিভি জানায়, শনিবার দিওয়ালির রাতে যথেচ্ছা আতশবাজির ব্যবহারের জেরে রাতেই দূষণের চাদরে মোড়ে দিল্লির বাতাস। এরপর সকাল থেকেই ব্যাপারটা দৃশ্যমান হয়।
পুরোপুরি ধোঁয়াশার চাদর গ্রাস করে দিল্লিকে। দূষণ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য উত্তর দিল্লি নগর নিগমের পক্ষ থেকে মধ্যরাতেই সদর বাজার এলাকায় জল ছিটিয়ে দেয়া হয়।
উত্তর দিল্লির মেয়র জয়প্রকাশকে হট স্পট এলাকায় ফগিং করতে দেখা গেছে যাতে বর্ধিত দূষণ কিছুটা হলেও কমে আসে।
আনন্দ বিহারে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স দেখা গিয়েছে ৫৭২, মন্দির মার্গ এলাকায় ৭৮৫, পঞ্জাবী বাগে ৫৪৪, সোনিয়া বিহারে ৪৬২, দ্বারকা সেক্টর ১৮-এর বিতে ৫০০, শহিদ সুখদেব কলেজ অফ বিজনেস স্টাডিজের কাছে ৯৯৯ এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স লক্ষ্য করা গেছে।
করোনার জেরে দিল্লি সরকার ৩০ নভেম্বর অবধি বাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে এর পরেও রোখা যায়নি বাজি ফাটানো।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজে অক্ষরধাম মন্দিরে দীপাবলির পূজা করার আগে সাধারণ মানুষকে আবেদন করেছিলেন, যাতে কেউ বাজি না ফাটান। কিন্তু তবুও বাজি ফাটিয়েছে।
তার বিষ-ফল ভুগতে হচ্ছে পুরো রাজধানী এলাকার মানুষকেই। বায়ু মানসূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা সংক্ষেপে একিউআই) বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছিল যথাক্রমে ৩১৪ ও ৩৩৯। সেটাই শনিবার পৌঁছে যায় ৪১৪-তে।
যা ‘মারাত্মক (সিভিয়ার)’ দূষণের শ্রেণিতে পড়ে। গত বছর দেওয়ালি পড়েছিল ২৭ অক্টোবর। সে দিন একিউআই ছিল ৩৩৭। এবং পরের দু’দিন তা হয় যথাক্রমে ৩৬৮ ও ৪০০। ফলে আগামী দু’দিনও বাজি পুড়লে দিল্লির বিপদ যে আরও বাড়বে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই বিশেষজ্ঞদের।
শুধু বাজি নয়, পুরনো সমস্যা ফসলের গোড়া পোড়ানো। ‘পিএম২.৫’ অর্থাৎ যে সব কণার আকার ২.৫ মাইক্রনের কম বাতাসে তা বাড়লে দৃশ্যমানতা কমে যায়, শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে এগুলো, হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে, ক্যান্সারসহ নানা রোগ বাধায়।
দিল্লির বাতাসে এই কণা বেড়ে যাওয়ার জন্য ৩২% দায়ী লাগোয়া রাজ্যগুলোতে ফসলের গোড়া পোড়ানোর চল।
বাতাসে ‘পিএম২.৫’-এর উপস্থিতি ৬০-এর বেশি হলেই সেটাকে অস্বাস্থ্যকর মনে করা হয়। দিল্লিতে শনিবার তা ৪০০-র উপরে ছিল অনেক এলাকাতেই। কিছু এলাকায় তো ৫০০-রও উপরে পৌঁছে যায়।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো নয়াদিল্লিতেও করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে। এরই মধ্যে বাতাসে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক দিল্লিবাসী এদিন জানিয়েছেন, চোখ জ্বালা করছে তাদের। জ্বলছে গলাও। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের।