Monday, June 23, 2025
Homeমন্তব্যবাবারা যে, কতোটা নিঃসঙ্গ..

বাবারা যে, কতোটা নিঃসঙ্গ..

ফরহাদ খান

বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ প্রাণীটির নাম হচ্ছে – ‘বাবা’
বিয়ের আট-দশ-পনের বছর পরে বউয়ের সঙ্গে আগের সেই ভালোবাসাটাও আর থাকে না। ভালোবাসাটা অভ্যাসে পরিণত হয়।

নিত্যদিন আলু-পেঁয়াজ, বাচ্চার স্কুল-কলেজ ইত্যাদি আলাপে ঘুম নেমে আসে চোখে।একান্ত নিজের কথা, নিজের ভাবনা, ভালোলাগা, কিছুই বলার অবকাশ হয়না। বিয়ের শুরুতে অথবা প্রেমিক জীবনে হয়তো বাচ্চার নাম ঠীক করেছিলেন দু’জন মিলে, রোমান্টিসিজম ছিল! সন্তান জন্মের পরে একরাশ দায়িত্ব কাঁধে চাপে। সন্তানের স্কুল – ভালো রেজাল্ট – বিয়ে – বাড়ি -গাড়ি ইত্যাদি আলাপেই ব্যস্ত থাকেন দু’জন।

একসময় হয়তো দুপুরে অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে ফোন দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নানা অর্থহীন গল্প গুজবে ভালোবাসা খুঁজে পেতেন। এখন দুপুরে ফোন দিলে হয়তো স্ত্রী বলে উঠেন, ‘ডিপোজিটের টাকাটা জমা দিয়েছো/কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল দিয়েছো?’ বাসায় ফিরে দেখেন, স্ত্রী ব্যস্ত বাচ্চাদের হোমওয়ার্ক নিয়ে।

যদি স্ত্রীকে বলেন, ‘আসো একটু নিরিবিলি কথা বলি, আমাদের কথা বলি।’ উত্তরে স্ত্রী হয়তো বলে উঠেন, ‘ঢং করার আর জায়গা পাও না? আমার রান্না আছে! একটু পরে বলবা ভাত দাও।’ কিংবা হয়তো বলে উঠবেন, ‘বাচ্চারা বড় হয়েছে, সে খেয়াল আছে?’

কোন কোনো সময় হয়তো আমাদের মায়েরা ফ্রি থাকেন। দুই কাপ চা নিয়ে দু’জন বসে পড়েন পুরানো স্মৃতি রোমন্থনে। হঠাৎ করেই হয়তো প্রতিবেশীর মেয়ের বিয়ের দাওয়াতের কথা মনে পড়ে। কমদামে, সম্মানজনক গিফট কেনার চিন্তা গ্রাস করে বসে দু’জনকে।

বাবারা যে, কতোটা নিঃসঙ্গ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ মেলে যখন মায়েদের সঙ্গে তাদের অভিমান পর্যায় চলে। আমাদের বেশিরভাগ সন্তানই মা ঘেঁষা। বাবার সঙ্গে কেমন যেন একটা দূরত্ব থাকে। সন্তানেরা ভাবে, ‘বাবা প্রাণীটা যেন কেমন! সেই সকালে বেরিয়ে যায়, রাতে ফেরে, দেখা হলে কেবল রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করে। এমন কেন এই লোকটা?’

মায়েরা সন্তানকে নিয়ে সংসার নামক পার্লামেন্টে ঐক্যজোট করে। বাবা দেখে তার সন্তানেরাও তার পক্ষে নেই, যাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তিনি বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন!

যাদের সঙ্গে বিছানা শেয়ার করেছেন, এক পাতে খেয়েছেন- সেই ভাই বোনেরাও সংসারের চাপে, জমি-বাড়ি-সম্পদ ইত্যাদি বৈষয়িক ঝামেলায় দূরের মানুষ হয়ে যায়।

বিভিন্ন কারণে একসময়ের কাছের বন্ধুদের সঙ্গেও সেরকম যোগাযোগ থাকে না। কিংবা থাকলেও নানা রকম সামাজিক অনুষ্ঠান, বৈষয়িক কথাবার্তা, ছেলেমেয়ের রেজাল্টের খবর আদান-প্রদানে আটকে থাকে সেইসব যোগাযোগ।

সহকর্মীদের সঙ্গেও একটা কৃত্রিম গাম্ভীর্য বজায় রেখে চলতে হয়, যাকে বলে প্রফেশনালিজম। কারো সঙ্গে একত্রে বসে, নিজের মনের একান্ত কিছু কথা বলার কেউ থাকে না – কেউই না।

মায়েরা হয়তো কথায় কথায় বলতে পারেন, আমি বাপের বাড়ি/বোনের বাড়ি চলে গেলাম। কিন্তু বাবাদের চলে যাবার মতো কোনো জায়গা থাকে না। একরাত কারো বাসায় গিয়ে থাকার মতো কোনোও জায়গাই অবশিষ্ট নেই যে আর তাদের।’

নিয়তির নির্মম বাস্তবতার পরিত্রাণ প্রত্যাশিত – সকল বাবাদের জন্য শুভকামনা !!

ফরহাদ খা‌নের ফেইজ বুক হ‌তে সংগৃহীত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য