নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি বহুতল আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাটে চুলার লিকেজ হওয়া গ্যাসে বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ ১১ জন দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় ওই ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার ভোরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লা এলাকায় মডেল গার্মেন্টসের দক্ষিণ পাশে স্থানীয় মফিজুল ইসলামের বাড়ির তৃতীয়তলার ফ্ল্যাট বাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোসহ দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে ভবনটিতে ফাটল ধরে ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়ায় বাড়ির বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে বের করে দিয়ে ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, পশ্চিত তল্লা এলাকার মফিজুল ইসলামের বাড়ির তৃতীয়তলায় বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করেন। এসব পরিবারের সদস্য গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
রাতে একটি পরিবারের লোকজন চুলার বার্নার বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। এতে চুলা থেকে গ্যাস বের হয়ে রান্নাঘরসহ অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে জমাট বেঁধে থাকে। ভোরে রান্নার জন্য চুলায় আগুন জ্বালালে নির্গত গ্যাস থেকে মুহূর্তের মধ্যে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায় এবং বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে গ্যাস সংযোগের রাইজারসহ অগুন ধরে যায়। এ সময় এক শিশুসহ ছয়জন নারী ও চারজন পুরুষ আগুনে দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে শিশুটিসহ ছয়জনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয় এবং পাঁচজনকে সদরের জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী আল আমিন জানান, ভোর ৬টার দিকে বিকট শব্দে গুম ভেঙে যায়। হৈ চৈ চেঁচামেচি, চিৎকারের শব্দ শুনে গিয়ে দেখি বাড়ির নিচ থেকে উপর পর্যন্ত আগুন জ্বলছে। পরে আশপাশের লোকজনের সহায়তার বালির বস্তা দিয়ে গ্যাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। কিন্তু ততক্ষণে ওই ঘরের ভেতরে থাকা দুটি পরিবারের প্রায় ১১ জন আগুনে দগ্ধ হন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, বিস্ফোরণের কারণে তিনতলা বাড়ির বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়ায় ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ফতুল্লা অঞ্চলের ম্যানজার প্রকৌশলী আতিকূল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে গ্যাসের চূলার চাবি ছাড়া ছিল বা চাবি লুজ থাকার কারণে গ্যাস নির্গত হয়ে জমাট বেঁধেছিল। ভোরে রান্না করার জন্য ম্যাচের কাঠি দিয়ে চুলা ধরানোর সময় আগুন ধরে বিস্ফোরণ ঘটে। তবে আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি গ্যাসের পাইপে কোনো লিকেজ বা রাইজারে কোনো সমস্যা ছিল না। তারপরও তদন্ত করে দেখা হবে কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
তিনি বলেন, গ্যাসের লিকেজের কোনো অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামত করা হয়। তিনি বলেন, সচেতনতার অভাবে অনেকেই গ্যাসের চুলা জালিয়ে রাখেন বা চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন। যে কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে।