সিলেট মহানগরের নবাগত পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে মো. রায়হান আহমদকে (৩৪) নির্যাতন করে হত্যার ঘটনাটিকে ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনভিপ্রেত’। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরীর আখালিয়ায় পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের বাড়িতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা জড়িত থাকায় আমি লজ্জিত। এর মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে বরখাস্ত এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়া আরও লজ্জার। আকবরকে ধরতে বাহিনীর অনেক ফোর্স কাজ করছে। তাকে ধরিয়ে দিতে জনগণও সহায়তা করতে পারেন। জনসাধারণের মধ্যে যদি কেউ আকবরের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন বা ধরতে পারেন, তা হলে দ্রুত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই আমি সিলেটে এসেছি। এর আগে এসএমপির গণমাধ্যম শাখা জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট পৌঁছান নতুন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল। এর পর তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করে নগরীর আখালিয়া এলাকার নিহারিপাড়ায় রায়হানের বাড়িতে যান। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিনি রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এর পর বাড়ির উঠানে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় এসএমপির অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) কামরুল আমীনসহ পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, রায়হানকে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর মামলায় প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত এসআই আকবরকে ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। অনেক বাহিনী তাকে ধরার চেষ্টা করছে। যেসব পুলিশ সদস্য তাকে পালাতে সহায়তা করেছেন, তাদেরও চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। অপরাধীর প্রধান পরিচয় সে অপরাধী। সে কোনো বাহিনীর সদস্য, এটি বিবেচ্য নয়।
এ সময় পলাতক আকবরের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, মসির চেয়ে অসি বড় হলে তো চলবে না। আকবরের এসব কর্মকাণ্ড যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ১১ অক্টোবর সিলেটে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে খুন হন রায়হান আহমদ (৩৪)। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির দুই সদস্য টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশীদকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পিবিআই।
এ ছাড়া এসআই আকবরসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছেন রায়হানকে নির্যাতনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া।
এ ঘটনায় সমালোচনার মুখে গত বৃহস্পতিবার সিলেটের পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখা থেকে বদলির প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে এসএমপির কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে পুলিশের স্পেশাল প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি পদে বদলির পর নিশারুল আরিফকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা নিশারুল আরিফ এসপিবিএনের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি থাকাকালীন ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান তিনি।
এর পর ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিশারুল আরিফকে এসপিবিএনের উপমহাপরিদর্শক হিসেবে পদায়ন করা হয়।