Saturday, August 2, 2025
Homeআইন-আদালতদেশে নামামাত্র পি কে হালদারকে গ্রেফতারের নির্দেশ

দেশে নামামাত্র পি কে হালদারকে গ্রেফতারের নির্দেশ

প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) বিমান থেকে নেমে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করে পুলিশের হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তিনি যাতে ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে পারেন সেজন্য পুলিশ প্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। আদেশে বিচারক বলেন, পি কে হালদার যদি দেশে আসেন তাহলে কোম্পানি মেটারটা নিষ্পত্তি করা যাবে। সেটা নিষ্পত্তি করার জন্য এ আদালত দেখতে চান যে, তিনি (পি কে হালদার) বিমানযোগে দেশে পা ফেলা মাত্র তাকে যেন গ্রেফতার করা হয় এবং জেলে নেয়া হয়। তাকে যেন বাইরে যেতে না দেয়া হয়। এ কাজটা যদি করা হয় তাহলে তার আবেদন অনুযায়ী তিনি যে মনে করছেন তাকে অপহরণ করা হবে তা আর হবে না। আদালত আরও বলেন, গ্রেফতার হওয়ার পরও কোম্পানির বিভিন্ন বৈঠকে পি কে হালদার থাকতে পারবেন। প্রয়োজনে তার চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে ডেসটিনির মামলায় আপিল বিভাগের একটি নির্দেশনা আছে। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড (আইএলএফএসএল)। এ আবেদন গ্রহণ করে বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। আর আইএলএফএসএলের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে করা আবেদনে বলা হয়- আগামী ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য তিনি টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার কথা রয়েছে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর একই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত আরেকটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল। সেদিন আদালত বলেছিলেন, পি কে হালদার কবে, কখন, কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও দুদকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। জানা গেছে, ২৮ জুন আইএলএফএসএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পি কে হালদার একটি আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়- তার অনুপস্থিতি ও দেশের মধ্যে সৃষ্ট ‘অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে’ ওইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ‘জটিল আকার’ ধারণ করেছে। তিনি দেশে ফিরলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ‘সংকট কেটে যাবে’ এবং করোনা মহামারীর সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখতে পারবে। সেজন্য তিনি ‘ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে’ দেশে ফিরতে চান এবং অন্য সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দায়দেনা মিটিয়ে ফেলতে চান। এরপর তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে আবেদন করে আইএলএফএসএল। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান বলে চলতি বছরের শুরুতে খবর আসে। এরপর আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে তাকে অপসারণের পাশাপাশি তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এর আগে আইএলএফএসএলে রাখা আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাতজন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২১ জানুয়ারি পি কে হালদার, তার মা, স্ত্রী, ভাই এবং ওই কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ১৯ জনের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেয়। তাদের দেশত্যাগ ঠেকাতে ওই নির্দেশ দেয়া হলেও পি কে হালদার ততদিনে লাপাত্তা হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর আসে।

আদালত সে সময় নির্দেশ দিয়েছিল এ সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পি কে হালদার ও তার সঙ্গীদের নগদ অর্থ, গাড়ি, মজুদসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। হাইকোর্টের সে আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগে আবেদন করেন আইএলএফএসএলের দুই পরিচালক। ২৬ ফেব্রুয়ারি তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য