Tuesday, June 24, 2025
Homeশীর্ষ সংবাদদেশের এক কোটি মানুষ ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত

দেশের এক কোটি মানুষ ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত

হেপাটাইটিস রোগের সংক্রমণ, প্রতিরোধী এবং এ নিয়ে করণীয় সম্পর্কে দেশের বেশির ভাগ মানুষ অজ্ঞাত। দেশে মোট জনসংখ্যার ৫.৫ শতাংশ হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং ০.৬ শতাংশ হেপাটাইটিস ‘সি’ দ্বারা আক্রান্ত। এ ছাড়া এক কোটি মানুষ ভাইরাল হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। সর্বশেষ ‘ডাইরেক্টর জেনারেল হেলথ বুলেটিন ২০১৯’ অনুযায়ী, ক্যান্সারে মৃত্যুর জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ দায়ী লিভার ক্যান্সার।

৮০ শতাংশ লিভার ক্যান্সার হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ দ্বারা আক্রান্ত হয়।

এ অবস্থার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার দেশে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘হেপাটাইটিস, আর অপেক্ষা নয়’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এবং ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্সের আহ্বানে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটিকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ভাইরাল হেপাটাইটিসের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

রোগটি সম্পর্কে ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী  কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। গ্রামে বসবাসরত ৬৪ শতাংশ মানুষ এই রোগ সম্পর্কে জানেই না। লিভার রোগ বলতে তারা মনে করে জন্ডিস। ’

গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই হেপাটাইটিস টেস্টের আওতায় নিয়ে আসার জোর দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা সংক্রমিত হলে তার সন্তানের সংক্রমণের হার ১০-২০ শতাংশ। আর যদি ই-অ্যান্টিজেন পজিটিভ হয় তাহলে ৮০-৯০ শতাংশ আক্রান্তের আশঙ্কা। অন্যদিকে সন্তান যদি মায়ের থেকে সংক্রমিত হয় তাহলে লিভার সিরোসিস হওয়ার আশঙ্কা ৮০-৯০ শতাংশ। পরে ২০-২৫ শতাংশ সন্তান বড় হয়ে লিভার সিরোসিস অথবা ক্যান্সার হয়ে মারা যায়।

বিশেষজ্ঞরা জানান, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এ রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে দেশে আধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তা ঠিকভাবে কার্যকর নয়। বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যেও লিভার রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ নবজাতক হেপাটাইটিস ‘বি’তে আক্রান্ত হয়, তাই হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ উভয়ই উদ্বেগের কারণ।

যত কম বয়সে হেপাটাইটিসে সংক্রমিত হবে ততই জটিলতা বাড়তে থাকে। কিন্তু ০-৫ বছরের নিচে সংক্রমিত রোগীদের ৮০-৯০ শতাংশ ক্রনিক হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। পরবর্তী সময়ে সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের আশঙ্কা অনেক বেশি। শিশুরা দুইভাবে সংক্রমিত হয়—মায়ের থেকে পেতে পারে অথবা কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস সংক্রমণের হার ১০-২০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ।

ডাব্লিউএইচও ২০১৬ সাল থেকে ‘অ্যালিমিনেশন ২০-৩০’-এর আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূল করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটির জন্য পাঁচটি মূল বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন। প্রথমত, নবজাতক ও শিশুদের ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় নিয়ে আসা; দ্বিতীয়ত, গর্ভবতী মায়েদের থেকে সংক্রমিত হওয়ার হার কমিয়ে আনতে হবে; তৃতীয়ত, ইনজেকশন, ব্লাড ও সার্জিক্যাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; চতুর্থত, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা ও একই সুচ বারবার ব্যবহার থেকে বন্ধ থাকাসহ সচেতনতা বৃদ্ধি করা; পঞ্চমত, চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসা রোগীদের থেকে সংক্রমণ রোধ করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য