তোফায়েল আহমেদকে বলা হয় একটি চলমান ইতিহাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্য পেয়ে রাজনীতিতে বেড়ে উঠেছেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক ছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত এবং প্রিয়ভাজন রাজনীতিবিদদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ ছিলেন অন্যতম। রাজনৈতিক জীবনে তোফায়েল আহমেদ এক ক্যারিসমাটিক রাজনৈতিক পুরুষ ছিলেন। তাঁর অনেকগুলো গুণ তাকে ইতিহাসে অনন্য জায়গা দিয়েছে। তিনি অনলবর্ষী বক্তা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ডাকসুর ভিপি হিসেবে তার বক্তৃতা শুধু ছাত্রসমাজকে নয়, পুরো দেশকে আবেগাপ্লুত করেছিল।
তোফায়েল আহমেদ একজন তুখোড় মেধাসম্পন্ন রাজনীতিবিদ। তার স্মৃতিশক্তি প্রখর। যেকোনো টেলিফোন নাম্বার থেকে শুরু করে দিন তারিখ অবলীলায় মুখস্থ বলতে পারেন। তাকে বলা হয় জীবন্ত ডিকশনারি। তিনি কর্মীবান্ধব এবং যোগাযোগের দিক থেকে তিনি অনেক এগিয়ে। বিভিন্ন কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও আওয়ামী লীগে তিনি যেন উপেক্ষিত। আজ তোফায়েল আহমেদের জন্মদিনে আওয়ামী লীগের খুব কম নেতাই তাকে স্মরণ করছেন। এ সময় তিনি দিল্লিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন।
তোফায়েল আহমেদ কেন আওয়ামী লীগের উপেক্ষিত, যিনি বঙ্গবন্ধুর এত ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন তিনি কেন আওয়ামী লীগে এত আদৃত নন। এর উত্তর খুঁজতে গেলে ৭৫ সালের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন, ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তোফায়েল আহমেদের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম আলোচনা আছে। আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতাকর্মীরাই মনে করেন যে, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচানোর জন্য তোফায়েল আহমেদের যে ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল সে ভূমিকা তিনি পালন করতে পারেননি। একইভাবে অনেকে মনে করেন যে, সেই সময় তোফায়েল আহমেদ অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন খুনি মোশতাকের কাছে। তার পঁচাত্তরের ভূমিকা তাকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার সিংহাসন থেকে চ্যুত করেছে।
এটি নয়, এর পরবর্তী সময়ে তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি বলেই অনেকে মনে করেন। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের সময় তোফায়েল আহমেদের মাইনাস ফর্মুলা, তার সংস্কার প্রস্তাব আওয়ামী লীগের নেতারা এখনও স্মরণ করেন। তারা মনে করেন যে, সেই সময়ে তোফায়েল আহমেদের কাছ থেকে এই ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল না। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গা থেকে ছিটকে পড়েন তোফায়েল আহমেদ। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে তিনি উপেক্ষিত। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগে অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। কিন্তু একজন নেতা জনপ্রিয় এবং তুখোড় মেধাবী হওয়ার পরও রাজনৈতিক আস্থা এবং বিশ্বাসের জায়গায় যদি তার নড়বড়ে হয় তাহলে তিনিও উপেক্ষিত হন। তোফায়েল আহমেদ হয়তো তারই প্রমাণ। তবে তোফায়েল আহমেদ ৭৫ সালে কি করেছে বা ওয়ান ইলেভেনে কি করেছে এ নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে ইতিহাসে একদিন নিশ্চয়ই তোফায়েল আহমেদের আসল ভূমিকা মূল্যায়ন করবে।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার