Tuesday, October 14, 2025
Homeঅপরাধটাঙ্গাইলে যুদ্ধাপরাধী গ্রেফতারে আনন্দ মিছিল

টাঙ্গাইলে যুদ্ধাপরাধী গ্রেফতারে আনন্দ মিছিল

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ

একাত্তরে বুদ্ধিজীবি হত্যা এবং গণহত্যার অভিযোগে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার দুই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করেছে।গ্রেফতারকৃতরা হলেন উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের বেড়াডাকুরি গ্রামের মৃত সবুর মাস্টারের পুত্র মনিরুজ্জামান কোহিনূর এবং চাতুটিয়া গ্রামের মৃত শফি উদ্দীনের পুত্র আলমগীর হোসেন তালুকদার।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের উপপরিচালক এবং তদন্তকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান খবরটি নিশ্চিত করেন।মামলার বিবরণে বলা হয়, গ্রেফতার হওয়া দুজনই একাত্তর সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী এবং রাজাকার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। একাত্তর সালের ৩০ জুন রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনূর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে সাথে নিয়ে গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল বাজারে হামলা চালান এবং ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্রবালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বিশিষ্ট লেখক মুসলিম উদ্দীনকে আটক করে গোপালপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে টানা এক সপ্তাহ অমানুষিক নিযার্তন করা হয়। তারপর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। তার পরিবার শহিদ মসলিম উদ্দীনের লাশের কোন সন্ধান পায়নি। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার শহিদ মসলিম উদ্দীনকে বুদ্ধিজীবি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে তার নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেন। অপর দিকে একাত্তর সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার মনিরুজ্জামান কোহিনূর ও আলমগীর হোসেন তালুকদার একদল রাজাকার ও আলবদরকে সাথে নিয়ে মাহমুদপুর গ্রামে হামলা চালান। বর্বর হানাদার বাহিনী আওয়ামীলীগের এমএনএ হাতেম আলী তালুকদারের বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেন। তারা শতাধিক বাড়িঘরে পুড়িয়ে দেয়ার পর ১৭ জনকে হত্যা করেন। এ গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন এ দুই কুখ্যাত রাজাকার।
মামলায় আরো বলা হয়, একাত্তরের ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত হওয়ার আগের দিন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে কোহিনূর ঢাকায় আসেন। ১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৯৩ হাজার পাকিস্তানী খান সেনার সাথে মনিরুজ্জামান কোহিনূর মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করেন। পরে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দী ছিলেন। পরে শিমলা চুক্তিনুযায়ী মুক্তি পেয়ে তিনি পাকিস্তানী সেনাদের সাথে পাকিস্তান চলে যান। পরে পাকিস্তানী নাগরিক হিসাবে নব্বইয়ের দশকে জাপান যান। ২০০২ সালে কোহিনূর দেশে ফেরেন। তিনি বর্তমানে একজন শিল্পপতি এবং দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা।অপরদিকে রাজাকার আলমগীর হোসেন তালুকদার ৭৬ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে যোগ দেন। পরে গোপালপুর পৌরশহরের সূতী দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসাবে গত নভেম্বরে অবসরে যান।গোপালপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, ট্রাইবুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা মোতাবেক মনিরুজ্জামান কোহিনুরকে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে এবং আলমগীর হোসেনকে গোপালপুর পৌরশহরের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।তদন্তকারি কর্মকর্তা মতিউর রহমান জানান, মনিরুজ্জামান কোহিনূরকে ট্রাইবুনালে হাজির করা হলে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর আলমগীর হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে আগামীকাল ট্রাইবুনালে হাজির করা হবে।এদিকে দুই যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতারের খবরে সর্বত্র স্বস্তির নিশ্বাস ফিরে আসে।বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসির দাবিতে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে পৌরশহরে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মিছিল শেষে গোপালপুর থানা ব্রীজ চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্র নাথ সরকার বিমলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র রকিবুল হক ছানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্বাছ আলী, আওয়ামীলীগ নেতা মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য