Tuesday, June 24, 2025
Homeআইন-আদালতটাঙ্গাইলে ফারুক হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র মুক্তি আবার কারাগারে

টাঙ্গাইলে ফারুক হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র মুক্তি আবার কারাগারে


শফিকুজ্জামান খান মোস্তফা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তির অন্তবর্তী জামিন বাতিল করেছে আদালত। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের প্রথম অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ মাসুদ পারভেজ জামিন বাতিলের এ আদেশ দেন। এই আদালত থেকেই গত ১০ ফেব্রæয়ারি মুক্তি অন্তবর্তী জামিন পেয়েছিলেন।
মুক্তি ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামী টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার ভাই। তার বাবা আতাউর রহমান খান এই আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত সরকারি কৌশুলী মনিরুল ইসলাম খান জামিন বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দীর্ঘ ছয় বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সহিদুর রহমান খান মুক্তি আদালতে আত্মসমর্পন করেন। আদালত তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর থেকে অন্তবর্তী জামিন পাওয়ার আগ পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন মুক্তি।
সরকারি কৌশুলী মনিরুল ইসলাম খান জানান, সোমবার ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার স্বাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য্য ছিলো। মুক্তির আইনজীবীদের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ বর্ধিতসহ স্থায়ী জামিন মঞ্জুরের আবেদন করেন। আবেদনে তারা জানান, তার চিকিৎসা অব্যাহত আছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।
এ দিকে মামলার বাদি নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ আদালতে অন্তবর্তী জামিন বর্ধিত না করার আবেদন জানান। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন, অন্তবর্তী জামিন পাওয়ার পর মুক্তির মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে শোভাযাত্রা করে শহর প্রদক্ষিণ ত্রাস সৃষ্টি করেছেন। বাদিসহ মামলার স্বাক্ষী এবং বাদি পক্ষের লোকজনদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তার এ সমস্ত কর্মকান্ডে জনমনে ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে। জামিন বাতিল না করলে বাদি পক্ষের এবং সাধারণ মানুষের চরম ক্ষতি হবে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
উভয় পক্ষের আইনজীবীদের শুনানী শেষে আদালত জামিন বাতিল করে মুক্তিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ দিকে মামলার স্বাক্ষী পুলিশ পরিদর্শক আবু ওবায়দা আদালতের হাজির হন। কিন্তু আসামী পক্ষ আদালতে জানান, তাদের পক্ষে জেরা করার জন্য আইনজীবী ঢাকা থেকে আসতে পারেনি। তাই তারা সময় প্রার্থনা করেন। আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন।  
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়ার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার হয়। এ ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদি হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৪ সালের আগস্টে গোয়েন্দা পুলিশ আনিসুল ইসলাম রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে এ দুজনের দেওয়া স্বীকারোক্তিতে হত্যার সঙ্গে তৎকালীন সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এরপর অভিযুক্তরা আত্মগোপনে চলে যান। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ও তার অপর তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দেন। আমানুর রহমান খান রানা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আত্মসমর্পণ করেন। প্রায় তিন বছর হাজতবাসের পর তিনি জামিন পেয়ে মুক্ত আছেন। তাদের অপর দুই ভাই আত্মগোপনে রয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য