Saturday, May 10, 2025
Homeবাংলাদেশজাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনার ৪দফা প্রস্তাব

জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনার ৪দফা প্রস্তাব

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট এখন দিন দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে  প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসার পর আশ্রয় দিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান ৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর আবার প্রায় ৩৫ হাজার নতুন রোহিঙ্গা শিশুর জন্মের কারণে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বছর বছর বেড়েই চলছে। কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো অপরাধীদের অভয়ারণ্যসহ নানা ধরনের নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে বিশ্নেনেতাদের ‘পিছুটান’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চাওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চারদফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে গতকাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক এক উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্টে অংশ নিয়ে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ‘তারা কি আমাদের ভুলে গেছে?’ শীর্ষক এক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। ওই ইভেন্টটি সঞ্চালনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ধীরগতিতে ক্ষোভ, প্রস্তাব:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ৪টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি তার প্রথম ও দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন বিষয়টি সমাধান করে এবং এই দুর্দশাগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের জীবনধারণের জন্য আমাদের মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এই বিষয়টিকে তাদের এজেন্ডার  শীর্ষে রাখে। তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, এই জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত, নিয়মে পরিনত করা এবং ঘৃণ্য নৃশংসতাকারী অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য চলমান এবং প্রচলিত আইনি এবং বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ছয় বছর ধরে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মর্মান্তিক বিতাড়নের ঘটনা দেখে আসা বিশ্বকে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের স্থায়ী দুর্ভোগের কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে তারা এখানে সমবেত হয়েছেন। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি নির্মম  হত্যাকান্ডের  কারণে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরপর থেকে আমরা আমাদের মাটিতে তাদের আশ্রয় এবং তাদের মৌলিক ও  মানবিক সেবা দিয়ে আসছি। আমি আমাদের সকল অংশীজন  এবং বন্ধুদের তাদের সংহতির পাশাপাশি মানবিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
ইস্যুটি এখন স্থবিরতার পর্যায়ে পৌঁছেছে উল্লেখ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত ছয় বছরে একজন বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারেনি। বাংলাদেশে তাদের দীর্ঘ উপস্থিতি কেবল তাদের আরও হতাশার দিকেই ঠেলে দিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন এটি কক্সবাজারের পরিস্থিতিকেও অনিশ্চিত করে তুলছে। ‘আশ্রয়দাতা  সম্প্রদায় আজ তাদের উদারতার শিকারে পরিণত হয়েছে, বলেন তিনি। রোহিঙ্গাদের চাহিদার প্রতি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি মানবিক সহায়তা পরিকল্পনায় ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের অভাব স্পষ্ট।ওই ইভেন্টের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। এ সময় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি রোহিঙ্গাদের জন্য আরো নতুন সহায়তার ঘোষণা দেন। একইসাথে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও মন্তব্য করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য