জাহিদ দুলাল, লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি:
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হওয়া ভোলার ২১ জেলের সন্ধান মিলেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি কারাগারে। তারা সেখানে বন্দি রয়েছেন। যার মধ্যে লালমোহনের ৪জন ও পার্শবর্তী চরফ্যাশন উপজেলার ১৭জন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লালমোহন থানার ওসি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রায় একমাস আগে আমরা জানতে পারি লালমোহনের ৪ জেলেসহ ২১ জেলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি কারাগারে আটক রয়েছে। আমাদের কাছে ওইসব জেলেদের তথ্য চাওয়া হলে আমরা তা ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করি। আশা করছি কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের কারাগারে বন্দি থাকা লালমোহনের পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের পাঙাশিয়া গ্রামের জেলে ইব্রাহিম, আবুল কালাম, বাবুল ও সালাউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা তাদের ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। ওইসব জেলেরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবারগুলোতে দেখা দিয়েছে দুর্দশা। ভারতে বন্দি থাকা এসব জেলেদের পরিবারের সদস্যরা অভাব-অনটনে কোনো রকমে দিন পার করছেন।
ভারতের কারাগারে বন্দি থাকা লালমোহনের পাঙাশিয়া গ্রামের নিখোঁজ জেলে ইব্রাহিমের স্ত্রী ইয়াসমিন বলেন, সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে প্রায় ৩ মাস আগে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন আমার স্বামীসহ তাদের ট্রলারে থাকা বাকীরা। গত প্রায় এক মাস আগে জানতে পারি তারা সকলে জীবিত অবস্থায় ভারতের একটি কারাগারে বন্দি আছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আমার স্বামীই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তিনি বাড়িতে না থাকায় এখন আমাদের অভাব-অনটনে দিন কাটছে। ঠিকমতো তিন বেলা খেতেও পারছি না। অপেক্ষায় রয়েছি স্বামীর ফেরার।
ভারতের কারাগারে বন্দি থাকা পাঙাশিয়া এলাকার আরেক জেলে বাবুলের মা শাহিনুর বেগমের কান্না থামছে না এখনো। সাগরে নিখোঁজের খবর পাওয়ার পর থেকেই ডুকরে ডুকরে ছেলের জন্য কান্না করেই চলছেন তিনি। বাবুলই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতিতে পরিবারটিতে দেখা দিয়েছে এক প্রকার মানবিক বিপর্যয়। অভাবের কারণে জেলে বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম দুই সন্তানসহ এখন আশ্রয় নিয়েছেন বাবার বাড়িতে। তাই দ্রুত ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ বাবুলের মা শাহিনুর বেগমের। তার মতো একই দাবী ভারতের ওই কারাগারে বন্দি থাকা বাকি জেলে পরিবারেরও।
এসব জেলেদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. তামীম আল ইয়ামিন বলেন, জেলার কিছু জেলে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। তাদের দ্রæত ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি তাদের খুব শিগগিরই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২০ অক্টোবর ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের সৈয়দ মাঝির ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার ২১ জেলে। এদের মধ্যে লালমোহনের ৪ জন ও চরফ্যাশনের ১৭জন রয়েছে। যারা ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ হন।