Sunday, June 22, 2025
Homeআইন-আদালতএকজন খুনীর জামিন, তারপর----

একজন খুনীর জামিন, তারপর—-

মোঃ সোয়েব মেজবাহউদ্দিন

ফরিদের ২ বার মেম্বার হওয়ার পর আর মেম্বার হতে মন চায় না। মন চায় চেয়ারম্যান হতে। কিন্তু সে জানে চেয়ারম্যান আলমগীর এত জনপ্রিয় যে তাকে হারিয়ে চেয়ারম্যান হওয়া সহজ নয়। ফরিদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে পড়ে ৮ম শ্রেনীতে আর ছেলে পড়ে ৫ম শ্রেনীতে। ৩ মাস পর নির্বাচন। ফরিদ তার শুভাকাংক্ষীদের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলেন আসন্ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসাবে প্রতিদন্ধিতা করবেন। যদিও বর্তমান আলমগীর চেয়ারম্যান অত্যন্ত্ জনপ্রিয়, তাকে পরাজিত করা সহজ হবে না।
ফরিদ তার শুভাকাংক্ষীদের নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমে পড়লেন। শুরু করলেন প্রচারনা। কিন্তু আশানুরুপ সারা পাচ্ছিলেন না। মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ফরিদ তার পরজয়ের খবর পাচ্ছিলেন। নির্দিষ্ট দিনে নির্বাচন শুরু হয়। আলমগীর চেয়ারম্যান প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাচ্ছেন আর তার ভোটাররা তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। পর পর ৩ বার নির্বাচিত আলমগীর চেয়ারম্যানের জনপ্রিয়তা শীর্ষে। এবার ও তিনি বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হবেন।
বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে ফরিদ মেম্বারের বাড়ীর কাছের কেন্দ্রে আসলেন আলমগীর চেয়ারম্যান। কেন্দ্র পরিদর্শন করার পর একটা ফাঁকা রুমে গিয়ে একটু বসলেন। তার ভোটাররা এগিয়ে এসে তার সাথে দেখা করলেন। একজন ভোটার তার জন্য চা আনতে গেলেন। হঠাৎ খবর পেয়ে ফরিদ মেম্বারের লোকজন এসে আলমগীর চেয়ারম্যানের উপর আকর্তিক হামলা করে তার বুকে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করে পালিয়ে যায়।
লোকজন দৌড়ে এসে রক্তাত্ত আলমগীর চেয়ারম্যানকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক আলমগীর চেয়ারম্যানকে মৃত ঘোষনা করে।

পুলিশ প্রথমে ঘটনাস্থল, পরে হাসপাতালে এসে আলমগীর চেয়ারম্যানের লাশ পোষ্ট মর্ডামের ব্যবস্থা করে। থানায় মামলা হয়। শুরু হয় পুলিশি তদন্দ। ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত লোকদের স্বাক্ষের ভিত্তিতে আটক করা হয় সন্দেহভাজন ৩/৪ জনকে। মামলার প্রধান আসামী করা হয় ফরিদ মেম্বারকে। আটক করা হয় ফরিদ মেম্বার সহ মোট ৫ জন।
শুরু হয় আলমগীর চেয়ারম্যান খুনের মামলা। দীর্ঘ ৩ বছর মামলার কার্যক্রম চলে। চেয়ারম্যান হওয়ার লোভে আলমগীর চেয়ারম্যানকে খুন করে খুনের মামলা চালাতে গিয়ে ফরিদ মেম্বারের সন্তানদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। ফরিদ মেম্বারের স্ত্রী স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে ফরিদ মেম্বারের সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়। খুনের মামলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় ফরিদ মেম্বার সহ আরো কিছু লোক। ৩বছর ৪ মাস পর
নিম্ন আদালতে স্বাক্ষী ও জেরা শেষে মামলা রায় হয়। ফরিদ মেম্বারের ফাঁসি এবং আরও ৮ জনের বিরুদ্ধে আদালত যাবত জীবন কারাদন্ড দেয়। আলমগীর চেয়ারম্যানের পরিবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।

ফরিদ মেম্বারের মেয়ে বাবাকে কারাগারে ডান্ডাবেরী পড়া অবস্থায় দেখে অচেতন হয়ে পড়ে যায়। ছেলে বাবার দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ফরিদ মেম্বার তাদেরকে বলে যে সে আবার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাদের মাঝে ফিরে আসবে।

ফরিদ মেম্বার জামিনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে। হাইকোর্ট থেকে দীর্ঘ ১ বছর শুনানীর পর ফরিদ মেম্বারকে জামিন হয়। ফরিদ মেম্বার জামিন নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। প্রথমে লঞ্চে, তারপর বাসে, তারপর একটা টেম্পুর সামনে বসে  একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বাড়ির পথে রওনা দেন। টেম্পু চলছে আর ফরিদ মেম্বার টেম্পুর সামনে বসে ভাবছেন, বাড়িতে গিয়ে সবাইকে চমকে দিবেন। তিনি মনে মনে বলছেন তার মেয়ে ও ছেলেকে দেয়া কথা রেখেছেন। খুনের মামলা হতে জামিন পেয়েছেন। পথিমধ্যে টেম্পুর ব্রেক নষ্ট হয়ে দূর্ঘটনার স্বীকার হয়, টেম্পুটা একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায়। টেম্পুর সামনে চালকের পাশে বসা ফরিদ মেম্বার সহ টেম্পুর ৪ জন যাত্রী আহত হয়। আহতদের দ্রুততম সময়ে নিকটতম হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক ফরিদ মেম্বাকে মৃত ঘোষনা করে। ফরিদ মেম্বারের পরিবার তার লাশ দেখে খোলা আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।

মূল্য কথা হলো পাপের ফল সকলকেই ভোগ করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য