Saturday, August 2, 2025
Homeইসলামইসলামই একমাত্র নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে

ইসলামই একমাত্র নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে

মোঃ রফিকুল ইসলাম

নারীকে একমাত্র ইসলামই সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। কখনো মা হিসাবে, কখনো স্ত্রী হিসাবে, কখনো কন্যা সন্তান হিসাবে আবার কখনো বোন হিসাবে। আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা:)কে জিজ্ঞেস করলেন ‘হে আল্লাহর রাসুল (স:) আমার সদ্ব্যবহারের সর্বাপেক্ষা অধিকারী ব্যক্তি কে? তিনি (রাসুল (স:) বলেন তোমার মা।

সে আবার বলেন এরপর কে? রাসুল (স:) বলেন তোমার মা, তিনি আবারো বলেন এরপর কে? রাসুল (স:) বলেন তোমার মা, লোকটি বলেন তারপর কে? রাসুল (স:) বলেন তোমার বাবা (মুসলিম হাদিস: ৬৩৯৪)

সুবহানাল্লাহ! এতে করে স্পষ্ট হয়ে যায় ইসলাম সর্বোচ্চ নারীকে সম্মান দেয় বলেই আল্লাহর রাসুল(স:) তাদের সম্মানের ব্যাপারে এতটা গরুত্বারোপ করেছেন। নারী যখন স্ত্রী তখনো তাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুমহান আল্লাহ নারীদের তাঁর বিশেষ নির্দশন বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর তাঁর নির্দশনাবলির মধ্যে আছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নির্দশনাবলি রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা চিন্তা করে। (সুরা: রুম, আয়াত-২১)।

মহান আল্লাহ একজন নারীকে এতটাই সংবেদশীল করে সৃষ্টি করেছেন যাহা কাগজে কলমে লিখে শেষ করা যাবে না। একজন আদর্শ নারী তার পরিবার, সন্তান তথা স্বামীর জন্য নিয়ামত। আবার একজন নারী অবেলা অর্থাৎ যত কষ্ট ক্লান্তিতে থাকেন কেন কখনও মুখ ফুটিয়ে কথা বলেন না। নীরবে নিবৃতিতে চোখের পানি জরানো ছাড়া দুঃখ কষ্টের কথা প্রকাশ করেন না। মহান আল্লাহ একজন নারীর মধ্যে এতটাই ধৈর্য্য সহনশীলতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তাদের মুখ ফাটলেও বুক ফাটে না। যে মায়ের পেট থেকে মানুষের জন্ম এবং জান্মের পর যিনি সার্বক্ষণিক খেয়াল রেখেছেন তিলে তিলে বুকের দুধ খাইয়ে বড় করেছেন সেই সন্তানই বড় হওয়ার পর কোন নারী রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে বা যাত্রীবাহি বাস/ট্রেনের ভীরে সংবেদনশীল যায়গায় আলতা করে স্পর্শ করে মজা নিয়ে থাকে। আবার পথে ঘাটে চলাচলে মাল বলে কটুক্তি করে।

অথচ সেই মায়ের কোলে শুয়ে থাকা শিশুটির কাছে এগুলোর কিছুই না। ছোট শিশুটির কাছে মায়ের স্তনগুলো বেঁচে থাকার সম্বল। আমরা আমাদের বাগানে ছোট একটি চারা বোপন করি যেমনি ঐ চারাটি মাটি থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে বেড়ে ওঠে ঠিক তেমনিভাবে শিশুটি কাছেও তাই। তখন মা হলেন শিশুটির বেঁচে থাকার নির্ভরযোগ্য ঠিকানা। যিনি এই শিশুটি জন্মের পর থেকে তাঁর চারাগাছ তথা তার শিশুটিকে খাদ্য সরবরাহ করে বড় করে তোলে। আমরা সবাই আমাদের মায়ের স্তন পান করেই বেঁচে থেকেছি এবং ছোট থেকেই বড় হয়েছি।

অপ্রিয় হলেও সত্য সেই পুত্র শিশুটিই বড় হয়ে কোন না কোন নারীর বক্ষ দেখে তাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা পোষণ করে, তাকে উদ্দেশ্য করে নোংরা বাক্য বিনিময় করে, নিজেদের শরীরে যৌন সুড়সুড়ি অনুভব করে, ভুয়ে যায় তার ছোট বেলার অতীতের কথা।

তাই আমরা পুরুষ জাতি নিজেকে পুরুষ না ভেবে একজন মানুষ ভাবতে হবে, নারীর সংবেদনশীল স্থানগুলোতে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবে না, তার শরীর দেখে নোংরা ইঙ্গিত করা যাবে না, নারীর শরীরকে খাদ্যদ্রব্য ভাববে না, সেদিনই হবে পুরুষ জাতির জন্য বড় পাওয়া বড় অর্জন।

আমাদের চিন্তা চেতনায় ধারণ করতে একজন নারী মা তুল্য। একজন নারীর জন্ম না হলে আমার আপনার কারোই জন্ম হতো না, মানব জাতির বিকাশ বন্ধ হয়ে যেত। তাই নারী জাতিকে সম্মানের চোখে দেখুন, তাদেরকে মানুষ ভাবতে শিখুন, কারণ আপনার মা, বোন কন্যাও একজন নারী। তাদেরও স্তন আছে, দেহ আছে সংবেদনশীল শরীর আছে আপনার মতো অন্য পুরুষের মনে নোংরা ইচ্ছা জাগ্রত হতে পারে। তাই পরিবর্তন শুরু হউক নিজের থেকেই। আসুন নিজেকে বদলে ফেলি তবেই অন্যরাও বদলাবে।

ইসলাম আগমনের অন্ধকার যুগে নারীরা চরম অবহেলিত ঘৃণিত পাত্রী ছিল। তাদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পর্যন্ত ছিল না। কেউ কেউ কন্যাসন্তানকে জীবিত মাটিতে পুঁতে ফেলার নির্মম ঘটনাও ঘটিয়েছিল। একমাত্র ইসলাম এসে তাদের সেই বর্বরতা রুখে দিয়েছিল। ইসলাম নারীর বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।

তাছাড়া নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার বিধান দিয়েছে। পবিত্র কোরআনুল কারিমের সুরা ‘নিসা’ নামে একটি সুরাও নাজিল হয়েছে। পবিত্র কোরআন-হাদিসে মাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে “আর তোমরা প্রতিপালক আদেশ জারি করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করো” (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত-২৩)।

লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, একান্ত সচিব, সিইও এবং চেয়ারপারসন, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য