
মোঃ রফিকুল ইসলাম
ষাটের দশক থেকে ২০০০ পর্যন্ত আমার দেখা মানুষের মধ্যে এত বিপর্যয় ছিল না। ২০০০ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে মানুষ যখন শহর ভিত্তিক হতে লাগলো তখন থেকেই মানুষ একাকি জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেন।
বিশেষ করে মানুষের মধ্যে যখন শিক্ষার হার বেড়ে যায় তখন থেকেই শিক্ষিত মানুষগুলোর মধ্যে কেমন যেনো একটা ভাব-গম্ভীর চলে আসে। আমার দেখ একজন সাধারণ পরিবারের লোক খুবই মেধাবী ছিলেন তিনি একদিন তার পিতাকে সার্ভেন্ট বলেছিলেন। যারা তাকে এবং বাবাকে চিনেন তারা ঐ মানুষটাকে তার পিতা সার্ভেন্ট বলার কারণে মারধর করেছিলেন। আমার দেখা মতে আমাদের ভিটা বাড়ীতে ঐ সময় কিছু লোক বসবাস করেছিলেন এবং ওনাদের পিতা, ভাই একত্রে মাঠে কাজ করেছিলেন এবং একত্রে হুক্কা টানতো। তাদের মধ্যে এমন মিল মহব্বত ছিল বাবা হুক্কা টেনে ছেলেকে দিতেন এমনও দেখা গেছে নাতিকেও দিতেন। তাদের মধ্যে কোন শিক্ষা ছিল না। তবে তাদের মধ্যে মিল মহব্বত ছিল, তাদের মধ্যে সুখ ছিল, আনন্দ ছিল।
আজ আমাদের মধ্যে ৬০%-৭০% শিক্ষিত এবং অনেকেই আছেন উচ্চ শিক্ষিত। এই যে, উচ্চ শিক্ষিত মানুষগুলোর মধ্যেই পিতা মাতাকে ভালো নজরে দেখেন না এমন পিতা মাকে ঘরের চাকর-চাকরানী বানিয়ে দিচ্ছেন তাদের স্ত্রী এবং শ্বশুড় বাড়ীর লোকজনের কাছে।
আমার প্রশ্নঃ তাহলে কি আমাদের শিক্ষার দোষ না নৈতিকতার অভাব।
মুম্বাইয়ে এক কোটিপতি মহিলা ‘আশা সাহানীর’ মৃতদেহের কঙ্কাল পাওয়া গেলো তার বেডরুমে। তাঁর পুত্র ‘ঋতু রাজ সাহানী’ আমেরিকার নামীদামী কম্পানীর উঁচু মানের ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তার ক্যারিয়ার গড়ার জন্য এতটাই ব্যস্ত দীর্ঘ এক বছর তিন মাস মায়ের খোজ নিতে পারেনি। অথচ মা তীলে তীলে জীবন বির্ষজন দিয়ে ১৭ কোটি টাকা মূল্যমানের বিলাস বহুল ফ্ল্যাট কিনেছিলেন এবং সেখানে তিনি একাই থাকেন।
২৩ শে এপ্রিল ২০১৬ সালে আশা সাহানী নিজের বৃদ্ধাকালের একমাত্র সহায় প্রাণপ্রিয় পুত্রকে অনুরোধ করেছিলেন হয় আমেরিকায় নিয়ে যেতে নতুবা কোনো বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে। একজন মা কতটা অসায়ত্ববোধ থেকে এই কথাটি বলেছিলেন। অথচ ব্যাস্ত ইঞ্জিনিয়ার পুত্র ! সময় বের করে উঠতে পারেননি।
ক’দিন আগে এক সকালে, ঋতুরাজ মুম্বাই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা চলে আসেন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। বহু ডাকাডাকির পরেও সাড়া না পেয়ে তিনি প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। মুম্বাই পুলিশ এসে দরজা ভেঙে এই দৃশ্য দেখে সবাই হতবাক। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কেউই দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কোন খবরই রাখেননি।
সামাজিক বিবেক-বিবেচনা-নৈতিকতা-বোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে বা এর কোনকিছুই আর অবশিষ্ট আছে কিনা, এই প্রশ্নই আসছে সামনে। আমাদের সন্তানদের কেরিয়ার গঠন করতে গিয়ে এতটাই নীচে নেমে যাচ্ছি।
রাষ্ট্র, সমাজ, সংসার, পরিবার সবাইকে সম্মিলিতভাবে এখনই ভাবতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং মাথায় রাখতে হবে শুধুমাত্র ক্যারিয়ার গঠনের যান্ত্রিক শিক্ষাটুকুই সব কিছু নয়। সমাজ ও সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ব্যাতিত সকল শিক্ষাই অসম্পূর্ণ। রাগ বিরাগ, আবেগ অনুভূতিহীন মেশিন বা রোবট নয় সন্তানদের আগে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।। নচেৎ … মনুষ্যহীন সমাজে একদিন সবাইকেই পস্তাতে হবে। (সংগৃহীত)
দুঃখের বিষয় আমরা আসল শিক্ষা দিনে দিনে হারিয়ে ফেলছি। আজকে আমার ইংরেজী শিক্ষার জন্য পবিত্র কোরআন এবং প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর পবিত্র হাদিস ভুলে যাচ্ছি। যার ফলে আমাদের সামাজিকতা, নৈতিকতা ধ্বংসের পথে।
আসুন আমরা আমাদের সন্তানকে “পবিত্র কোরআন এবং প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর পবিত্র হাদিস শিক্ষা দেই। তবেই আমাদের জীবনে অপবিত্রতা, যান্ত্রিকতা, অশিক্ষা-কুশিক্ষা আসবে না। সকল সময় আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের মনে পরকালের ভাল-মন্দের হিসাব মনে থাকবে। মনে থাকবে জান্নাত এবং দোজখের কথাগুলো।
পরিশেষে, আমরা যারা ষাট দশক দেখেছি, অশিক্ষিত মানুষগুলোর মধ্যে মাতৃত্ববোধ কতটুকু ছিল। আজ উচ্চ শিক্ষিত হয়ে পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্তে বসবাস করেছি। ভালো মন্দ দেখতে পাচ্ছি। আজ আমরা সবাই বড় লোক হতে চাই, আমরা চাই শুধু টাকা আর টাকা আরও চাই টাকা।