আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আরও প্রায় দুই বছর। কিন্তু এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের মাঠ জরিপের কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ একটি বিশেষ টিম গঠন করেছে। এই টিমে আওয়ামী লীগের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি এই টিম পরিচালনা করছেন। দু’টি আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থাকে মাঠ জরিপের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই জরিপকারী সংস্থাগুলো মাঠে বিভিন্ন রকম জরিপকার্য পরিচালনা করছে। মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে পাঁচ ধরণের তথ্য মাঠ পর্যায় থেকে নেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এই সমস্ত তথ্যের উপরই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।
যে পাঁচ রকম তথ্য সবগুলো নির্বাচনী এলাকা থেকে নেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে-
১. এলাকায় জনগণের কি অবস্থা এবং এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কতটুকু হয়েছে।
২. বর্তমান এমপির জনপ্রিয়তা কতটুকু, তার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কেমন এবং তিনি এলাকায় তার ইমেজ কতটুকু ধরে রেখেছেন।
৩. নতুন কোনো প্রার্থী আছে কিনা, তিনি প্রার্থী এলাকায় কি কাজ করছেন এবং তার গ্রহণযোগ্যতা এলাকায় কতটুকু।
৪. অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন এবং তাদের জনপ্রিয়তা এবং অবস্থান কি।
৫. নির্বাচনে যে অঙ্গীকারগেুলো করা হয়েছে, সে অঙ্গীকার কতটুকু পূরণ করা হয়েছে এবং কতটুকু বাকি রয়েছে। দুই বছর সময়সীমার মধ্যে ওই অঙ্গীকারটুকু পূরণ করা সম্ভব কিনা।
মূলত এই পাঁচটি তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য দু’টি আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যারা গত জানুয়ারি মাস থেকে মাঠে কাজ করছে। আগামী এপ্রিলের মধ্যে মাঠ জরিপের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এই মাঠ জরিপ চূড়ান্ত করার পর জুন-জুলাই নাগাদ এই দুটি জরিপ সংস্থা একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে জমা দিবেন।
ধারণা করা হচ্ছে যে, এই জরিপের উপর ভিত্তি করেই আওয়ামী লীগের আগামী মনোনয়নের ভিত্তি স্থাপিত হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন হবে অত্যন্ত কঠিন এবং এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের শাসন আমলে গত ১৩ বছরে যে অগ্রগতি, অর্জন, এটিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য আগামী নির্বাচনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। আর এই জন্যই আগামী নির্বাচনে যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে কোনো রকম ঝামেলা না হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, গত নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্য থেকে যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন, তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না, এটি মোটামুটি নিশ্চিত।
যে সমস্ত ব্যক্তিরা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না, তাদের মধ্যে রয়েছেন-
১. যারা দলের ভিতরে বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন, স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে, তাদের একটি বড় অংশ।
২. যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে এবং নানা রকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যারা জড়িয়ে পড়েছেন।
৩. যে সমস্ত এমপিরা এলাকায় জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ করেছেন, নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন।
৪. গত নির্বাচনে যারা পরাজিত হয়েছেন।
৫. যে সমস্ত ব্যক্তিরা এলাকায় যাচ্ছেন না এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
এই পাঁচ ধরণের ব্যক্তিরা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না। তবে মাঠ জরিপের পর বুঝা যাবে যে, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য আওয়ামী লীগের কৌশল কি হবে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে মনোনয়নের অত্যন্ত সজাগ এবং সচেতন থাকবে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে, তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য এখন থেকেই সতর্ক আওয়ামী লীগ।
বাংলা ইনসাইডার