Monday, June 23, 2025
Homeবাংলাদেশবিজিবি সদস্যরা দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুনঃ প্রধানমন্ত্রীর

বিজিবি সদস্যরা দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুনঃ প্রধানমন্ত্রীর

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কাছে আমার প্রত্যাশা- আপনারা দেশপ্রেম, সততা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার সকালে ‘বিজিবি দিবস-২০২১’ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখবেন- শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। তাতে নিজেদেরই ক্ষতি। চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন। কর্তৃপক্ষের আদেশ মেনে চলা শৃঙ্খলা বাহিনীর অবশ্য কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম প্রহরেই এই বাহিনীর সদস্যরা পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পিলখানা থেকে তৎকালীন ইপিআরের বেতার কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়। তৎকালীন ইপিআর প্রচার করায় পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ দেন ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলী। তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস, জাতির পিতার প্রত্যাশিত আধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে বিজিবি এগিয়ে যাবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে ও দেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে সীমান্তের অতন্দ্রপ্রহরী হিসেবে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় তাকে একটি সুসজ্জিত দল অভিবাদন জানায়।প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিজিবি সদস্যদের বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি পদক বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি সম্মেলন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ঐতিহ্যবাহী বিজিবির গর্বিত সদস্য। এ বাহিনীর রয়েছে ২২৬ বছরের গৌরবময় ইতিহাস। ১৭৯৫ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কালের পরিক্রমায় এ বাহিনী আজ একটি সুসংগঠিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইপিআরের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার বাঙালি সৈনিক সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং ৮১৭ জন শাহাদত বরণ করেন। ইপিআরের দুজন বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ল্যান্স নায়েক নুর মোহাম্মদ শেখ ও শহিদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ আমাদের গর্বের প্রতীক। ইপিআরের আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম ও ৭৭ জন বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে বিজিবির ইতিহাস সমৃদ্ধ করেছেন উল্লেখ করে তিনি শাহাদাতবরণকারী সদস্যদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর পরই বিডিআরে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আমরা সরকার গঠন করি। সরকার গঠনের এক মাস ১৯ দিনের মাথায় ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে; যা দ্রুত সমাধান করি। তৎকালীন বিডিআরের ট্রাজিক ঘটনায় শহিদ ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন মৃত্যুবরণ করেন। সকল শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সময় একটি অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলার জন্য জাতির পিতা এই বাহিনীর পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ তৎকালীন ইপিআরের পরিবর্তে বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) নামকরণ করেন। পরে এই আওয়ামী লীগ সরকারই ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ আইন-২০১০ পাসের পর এই বাহিনীকে পুনর্গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবিকে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। এই বাহিনীকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পুনর্বিন্যাস করে পাঁচজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচটি রিজিয়নে (অঞ্চল) বিভক্ত করা হয়েছে। বিজিবিকে আধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে রূপান্তরের জন্য ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ৯২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বিজিবির কার্যক্রম পূর্বের চেয়ে বহুলাংশে বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃষ্টির মাধ্যমে রাশিয়া থেকে কেনা দুটি অত্যাধুনিক এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টার সংযোজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিকাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন ও সম্প্রসারণ করেছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ১২টি আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকল, ২৪৭টি অল টেরেইন ভেহিকল (এটিভি), উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের ১২টি হাইস্পিড বোট, দুটি ভেহিকল এক্সরে স্ক্যানার মেশিন কেনা হয়েছে। এছাড়া ১৪টি আধুনিক ও যুগোপযোগী এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স কেনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিজিবিতে নয়টি নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে সর্বমোট ৮১৮ জন নারী সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। তারা সফলভাবে তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিটে যোগদান করেছেন, পুরুষ সৈনিকের পাশাপাশি তারা সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে ইতোমধ্যে চারটি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় দুটি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃষ্টির মাধ্যমে সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। ২৪২টি নতুন বিওপি সৃষ্টি এবং ১২৬টি বিওপি সীমান্তের কাছে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রামের পাশপাশি চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুনভাবে আরও একটি ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ’ সৃষ্টির উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবয়নাধীন রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদক ও নারী-শিশু পাচার রোধে বিজিবির কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, সীমান্তে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনকে সহায়তা করাও আপনাদের অন্যতম দায়িত্ব। সংসদীয় নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং বিভিন্ন সময়ে উদ্ভুত বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও দেশের গঠনমূলক কাজে আপনাদের ভূমিকা সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিজিবির আভিযানিক কর্মদক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে অফিসার্স, জেসিও’স ও অন্যান্য পদবির বিজিবি সদস্যদের জন্য নতুন কোয়ার্টার, বাংলো, মেস, সৈনিক ব্যারাক, আধুনিক বিওপি, অফিস বিল্ডিং, ওয়াটার রিজার্ভার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ইত্যাদিসহ সর্বমোট ১১৩টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ হাজার ৩৮৩ জন বিজিবি সদস্যকে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যদের রেশন সুবিধা এবং মসলা ভাতা পূর্বের তুলনায় অনেক গুন বাড়ানো হয়েছে। বিজিবি সদস্যরা যেন অবসরের পরও স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারেন সে লক্ষ্যে অবসরোত্তর বিজিবির সদস্যদেরকে দুই সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের আজীবন রেশন সুবিধার নিমিত্তে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে তার সরকারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন করছি।আগামী প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মমর্যাদাশীল, উন্নত এবং সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

সর্বাধিক জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য