মোঃ রফিকুল ইসলাম
ধৈর্য্য এমন একটি গাছ যার সারা গায়ে কাটা! কিন্তু ফল অত্যন্ত মজাদার! সুখ দুঃখ মানুষের জীবন সঙ্গি। সুখ বা দুঃখ কাউকে বাদ দেয়া যাবে না। একে অপরের পরিপুরক। একে অপরের খেলার সাথি। এটাকে ভাগাভাগি করে নিতে হয়। একটা নিয়ে অন্যটাকে ছেড়ে দেয়া যাবে না। তাই নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনার স্বাক্ষী।
পবিত্র মাহেরমজান মাসে মানুষ বিশ্বাস এবং পানাহার থেকে বিরত থাকে বা উপবাস করে। এটাই মানুষের ধৈর্য্য। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে পরীক্ষার মাধ্যমে পবিত্র করেছেন আর মানুষও আল্লাহর সেই গায়েবী নির্দেশনা মনে প্রাণে বিশ্বাস ও ধৈর্য্য নিয়ে সারাদিন উপবাস করেন একমাত্র মহান আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন আমি ৬টি জিনিসকে লুকিয়ে রেখেছি ৬টি স্থানে। কিন্তু মানুষ তা খুঁজে বেড়ায় ভিন্ন জায়গায়। যথাঃ (১) আমি দ্বীন ইসলামকে রেখেছি ক্ষুধা, দারিদ্রতা ও ধৈর্যের মধ্যে, কিন্তু মানুষ তা খোঁজে উদরপূর্তি ও দুনিয়ার স্বচ্ছলতার মধ্যে। (২) আমি সম্মান রেখেছি শেষ রাতের ইবাদতে, কিন্তু মানুষ খোঁজে, শাসক ও ক্ষমতাবানের সাহচর্যে (৩) আমি সুখ স্বাচ্ছন্দ্য রেখেছি জান্নাতে, কিন্তু মানুষ তা খোঁজে দুনিয়াতে। (৪) আমি বড়ত্ব রেখেছি বিনয় ও নম্রে, কিন্তু মানুষ তা খোঁজে অহংকারে। (৫) আমি ধনী হওয়া রেখেছি অল্প তুষ্টিতে, কিন্তু মানুষ তা খোঁজে লোভ- লালসার মধ্যে। (৬) আমি দোয়া কবুল হওয়াকে নিহিত রেখেছি হালাল উপার্জনের মধ্যে, কিন্তু মানুষ তা খোঁজে হারাম উপার্জনে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন|
মানুষ পড়তে বসলে বা কোন অফিসে কাজ করতে করতে অধৈর্য্য হয়ে পড়ে পড়ে। কিন্তু তার কাগজ, তার কলম তার কম্পিউটার, তার ক্যালকুলেটর কখনও অধৈর্য্য হয় না। তাই মানুষের চেয়ে কাগজের ধৈর্য্য অনেক বেশী। মানুষের ধৈর্য্য নেই কিন্তু কাগজের আছে। মানুষ অন্য মানুষের আদর্শ, ধর্ম বিশ্বাস এসবের সম্মান দেয় না অথচ কাগজ দেয়। কাগজ কাউকে অসস্মান করে না। ছোট বড় সবার জন্য কাগজ কলম প্রিয়। তাইতো বলা হয়েছে কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও দামী এবং তলোয়ারের চেয়েও দাড়ালো।
যেখানে রাত সেখানে দিন শুধু অপেক্ষার পালা। আকাশে যখন মেঘ জমায় তখন আড়ালে সূর্য্য। মেঘ সরে গেলেই সূর্য্যের হাসি। মেঘ যেমন অন্দকার নিয়ে আসে পরক্ষণেই সূর্য্যের দেখা। সূর্য্য এলেই অন্দকার কেটে যায়। চতুরদিকে আলো ছড়ায়। আমরা আলোকিত হই।
আমাদের কাজে আমরা যখন সাফল্য পাই তখন আমরা ভুলে যাই আমাদের ব্যর্থতা। সাফল্যের সাথেই ব্যর্থতা। ব্যবসা বাণিজ্যে যেমন সাফল্য তেমনি ব্যর্থতা। তাই বলে শুধু সাপল্য আশা করা যাবে না ব্যর্থতাও মেনে নিতে হবে। ব্যর্থতার জন্য পিছ পা হতে নেই।
জমিতে আমরা যখন ফসল ফলানোর জন্য যাই। ঐ জমিতে ফসল কতটুকু হবে কতটুকু হবে না আমরা কিন্ত কেউ তা জানি না। আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ আমাদের কিছু না কিছু অবশ্যই দান করবেন। সেই আশা নিয়েই আমরা জমি চাষ করি। আমাদের মনে রাখতে হবে ভালো মন্দের হিসাব। আমাদের বিশ্বাস রেখেই জমিতে চাষ দিতে হবে।
মানুষ আজ যা শিখে আগামী দিন তা ভুলে যায়। মনে থাকে না। যতটুকু থাকে তা পরিপূর্ণ নয়। পক্ষান্তরে মানুষের আনন্দ, সৌন্দর্য, মানুষের মহত্ব সবার উপর বিশ্বাস কাগজ তা যুগ যুগ ধরে রাখে। ধরে রাখে তার বিশ্বাসের খতগুলো।
মানুষের স্মৃতি, মানুষের ভালোবসা, মানুষের উন্নতি এক মুহুর্ত অপেক্ষা করতে হয় না। যদি না তার কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ কোন নোট থাকে। কাজ মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। মানুষ মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে পৃথিবী বদলে দেবার জন্য কারও এক মুহুর্ত অপেক্ষা করতে হবে না। চাই শুধু সৎ ইচ্ছা, সৎ সাহস এবং একাগ্রতা।
আমাদের চার পাশে যে সমস্ত সৌন্দর্য ছড়াইয়া ছিটাইয়া রয়েছে তার কথা ভাবতে হবে তবেই আমাদের সুখী হওয়ার পথ মসৃন হবে। আমাদের উপলব্ধিতে সুন্দর ও ভালোবাসার স্থান করে নিতে হবে। আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই সুখী হতে হবে। আমাদের চারিদিকের যে সব সৌন্দর্য বিরাজ করতে তা দেখে আনন্দ উপভোগ করতে হবে। আমরা লিখনীর মাধ্যমে দুঃখ কষ্ট সবকিছু ঝেড়ে ফেলতে পারি; আমাদের দুঃখ অদৃশ্য হয়ে যাবে। আমাদেরকে সাহস যোগাতে হবে। তবেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। আমরা দেখতে পাই সব সময় কিছু সৌন্দর্য।
আমরা তা থেকে উপভোগ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন রোদ, বৃষ্টি, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ উপগ্রহ আপন কক্ষে প্রতিনিয়ত স্বাধীন ভাবে উদয় হচ্ছে, আবার স্বাধীনভাবে অস্তমিত। আমাদের উপলব্ধিতে এসবের স্থান করে নিতে হবে। আমরা সমস্ত দুঃখ কষ্টের কথা ভাবি না, শুধু ভাবনায় থাকে সৌন্দর্যের কথাগুলো। আমরা যে বস্তুতে সুখি অন্যকে তা ভাগ করে দিতে হবে। তবেই সুখ মূল্যায়িত হবে। আমাদের ভাবতে হবে যিনি নিজে সুখি, তিনি অন্যকেও সুখি করতে পারে। সবার মধ্যে সবচেয় তীক্ষ্ণ অস্ত্র হলো সদয় এবং কোমল হৃদয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে যেখানে আশা, সেখানেই জীবন। এটা আমাদের নতুন সাহসে পূর্ণ করে এবং আমাদেরকে শক্তিশালী করে তোলে। আমাদেরকে শক্ত হতে সাহায্য করে, আমাদেরকে ধৈর্য্য ধারনে সহযোগীতা করে। তাই যেকোন বিপদে সাহস এবং ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। আমি মনে করি, আমি বিশ্বাস করি আমরা মানুষ অবশ্যই আমাদের সুন্দর একটা হৃদয় আছে যা দিয়ে অন্যকে ভালোবাসতে পারি, অন্যের উপকারে আসতে পারি, দেশের জন্য কাজ করতে পারি। সুন্দর পৃথিবী উপভোগ করতে পারি। পরিশেষে, বলবো আমরা যেকোন কাজে হতাশা হবো না। কোন কাজে হাল ছাড়বো না। যেকোন কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবো এবং জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সব সময়ই ধৈর্য্য ধারন করে লড়াই চালিয়ে জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। লেখকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, পিএস টু মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ।