আজ রক্তঝরা জেলহত্যা দিবস। ভয়াল-বীভৎস্য ৩ নবেম্বর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। বেদনাবিধুর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় ইতিহাসের আরেক ভয়ঙ্কর দিন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে বেদনাবিধুর কলঙ্কিত দিন। স্বাধীন বাংলাদেশের যে ক’টি দিন চিরকাল কালো দিন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, তার একটি ৩ নবেম্বর। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে অন্যতমটি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের এ দিনে।
৩ নবেম্বরের সেই নিষ্ঠুরতা-পৈশাচিকতার ভয়াল ক্ষত চিহ্ন এখনও স্পষ্ট। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন নিউ জেল, বর্তমানে যার নাম দেয়া হয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ী সেল। এই সেলে সারিবদ্ধ চারটি কক্ষ। সেলের প্রথম কক্ষের বিশাল লোহার দরজা। সেই দরজার মোটা লোহার রডে ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে তিনটি বড় বড় গর্ত জানান দিচ্ছে কী নিষ্ঠুরতাই না ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর কালরাত্রে। এই কক্ষেই জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে ব্রাশফায়ার এবং পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিল একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা। বাঙালী জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে ৪৬ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৩ নবেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ জাতির চার বীরসন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম পরিচালক, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এমন জঘন্য, নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল।
এর আগে একই বছরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার ঘনিষ্ঠ এই চার সহকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পাঠানো হয়েছিল। পরবর্তী অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্যু, পাল্টা ক্যু’র রক্তাক্ত অধ্যায়ে মানবতার শত্রæ ও বঙ্গবন্ধুর হন্তারক ওই একই পরাজিত শক্তির দোসর বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে জাতীয় চার নেতাকে। সেই থেকে প্রতি বছরের মতো আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিরা এ দিনটিকে জেলহত্যা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে।